উড়তে নেই মানা
– মো. শফিকুল
কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এখন আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। এখন আমায় দমায় কে, আমিতো এখন মুক্ত! নিজের ইচ্ছা মতো চলবো, কেউ আর আমাকে পড়তে বসতে বলবেনা। কেননা, ভালমন্দ বোঝার বয়সতো আমার হয়েছে!
বিশ্ববিদ্যালয় জিবনের কয়েক মাস যেতে না যেতেই বাবাকে বলে একটা স্মার্ট ফোন কিনে নিলাম। বাবাকে বুঝিয়ে বলেছিলাম, আমার একটা স্মার্ট ফোন হলে লেখা-পড়াটা আরেকটু ব্যাটার হবে। বাবা ফোন কিনে দিলেন। ফোনটা হাতে পাওয়ার পর বন্ধুকে ধরে একটা সিম কার্ড কিনে নিলাম। আর সিমটা ফোনে ঢুকিয়েই সাথে সাথেই একা ফেসবুক আইডি খুলে নিলাম।
ওমা!! এ কেমন ফেসবুক এখানে অনেক কবি, অনেক পাখি। যেমনঃ অরণ্যের কবি, অপ্রকাশক কবি, অন্ধকারের কবি, হলুদ পাখি, একলা পাখি, সন্ধার কীট আরো কত কি! যাইহোক অনেকের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল। রাত যেগে চ্যাট করা, পোষ্ট পড়া আর লাইক কমেন্ট করতে করতেই দিন চলতে থাকলো। ভালই কাটছে দিনগুলো আনন্দ আর উল্লাসে।
হঠাৎ একটা অচেনা আইডি থেকে “হ্যালো” শব্দটা এলো আমিও সাথে সাথেই হ্যালো বলে দিলাম আরো বললাম ‘ হাউ আর ইউ?’
এভাবেই চলতে থাকলো আমাদের কথোপকথন। প্রথম দিকে বিশ্বাস হচ্ছিলনা যে সে একজন মেয়ে। তাই তার থেকে কৌশলে ফোন নাম্বার চাইলাম। সে-ও ফোন নাম্বার দিয়ে দিলো। এরপর ভালো বন্ধুত্বও হল।
আমি যদি ফুল হই, সে হয় ফুলের কলি আর আমি পাখি হলে সে হয় পাখির ডানা। যাই হোক, আমাদের উড়তে সেই মানা। আর এভাবেই তার প্রতি আমার এক অদ্ভুত মায়া জন্মাতে লাগলো। ফেসবুকে ঢুকলেই আগে তাকে একটা মেসেজ কখন মেসেজের রিপ্লাই আসবে তার জন্য বসে থাকা। ফোনে চার্জ না থাকলে চার্জে লাগিয়ে কথা বলা। আর কথা বলতে না পারলে ভাল না লাগা। এগুলো সব অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেল।
অনার্স ১ম বর্ষের পরিক্ষা শুরু; তবে এখন আার পরিক্ষার প্রতি তেমন কোন কৌতূহল নেই যেমনটি ছিল স্কুল কলেজ লাইফে। কলেজে থাকা কালে লেখা পড়ায় কৌতুহল ছিল মা-বাবার দেওয়া চাপে “তোকে এ প্লাস পেতেই হবে, ডাক্তার বা ইন্জিনিয়ার হতেই হবে “।
কিন্তু এখনতো আর ঐসব বাঁধা বা চাপের ধার ধারিনা। এখন যা মনে চাই তাই করি। যদি কোন বিষয়ে ফেইল করি তো কি আর হবে পরবর্তি বছরে ইম্প্রুভ দিবো। কোন ভয় নেই! তাইতো পরিক্ষার আগের রাত্রেও প্রিয়তমার সাথে চ্যাটিং এ ব্যস্ত। পড়তে বসতে ইচ্ছা করেনা শুধু তার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয়। এ কেমন মায়া!
তার সাথে মেসেজ বিনিময় করলেই মনে প্রশান্তি লাগে অথচ তাকে আমি চিনিনা , তার সাথে না হয়েছে কখনো দেখা তবুও ঘুমাতে গেলে এপাশ ওপাশ করতেই রাত যায় ফুরিয়ে। কষ্ট হয় যখন সে অভিমান করে।
সেও কি আমার মতো এপাশ ওপাশ করে যখন আমার সাথে কথা বলতে না পারে। সেও কি কষ্ট পায় যখন আমি অভিমান করে? না, না তার এমনটা হয়না। হ্যাঁ, তার এমনটা কখনো হয়না। অথচ তার জন্যই আমার ক্যারিয়ার যাচ্ছে ধ্বসে – তবুও নাহি ছাড়ি তার পিছে। এ কেমন মায়া!
মো. শফিকুল,
শিক্ষার্থী, শেরপুর সরকারী (বিশ্ব.) কলেজ।
(শেরপুর টাইমস ডট কমের “সাহিত্য পাতা” সকলের জন্য উন্মুক্ত। আপনার স্বরচিত ছড়া- কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য ইমেল করুন sherpurtimesdesk@gmail.com এই ঠিকানায়।)