রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান বলেছেন ‘উত্তর অঞ্চলের জনপদকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কারিগরি শিক্ষা ও অভিবাসন সহায়ক ভাষা শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।’ সোমবার বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রংপুর বিভাগের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানি, আরবি ভাষা শিক্ষাসহ অভিবাসনে সহায়ক অন্যান্য ভাষা শিক্ষা কোর্স চালুকরণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান আরো বলেন- দেশের অর্থনীতি মূলত কৃষি, রেমিটেন্স ও গার্মেন্টস শিল্প এই ৩টি খাতের এর উপর অধিক নির্ভর করে। অর্থনৈতিক ভাবে উত্তরাঞ্চলের জনপদ তথা রংপুর অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ এ অঞ্চলের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা। তিনি বলেন- ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার মতো উন্নত দেশে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম; কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশী অভিবাসীদের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে গমনকারী অভিবাসীদের মধ্যে অধিকাংশই অদক্ষ শ্রমিক। সংখ্যার আনুপাতিক হারে বাংলাদেশ অনেক দেশ থেকে এগিয়ে থাকলেও দক্ষতার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশী অভিবাসীদের উপার্জন অপেক্ষাকৃত কম। বাংলাদেশের অভিবাসীরা মূলত পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, হাসপাতাল পরিষ্কারক, গৃহকর্মী, রাখাল, দোকানপাটে বিক্রয় সহকারী প্রভৃতি কাজে নিযুক্ত। এদেশের বিপুল সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিত বেকার যুবক রয়েছে যারা দেশে জীবিকার সংস্থান পাচ্ছে না, আবার প্রয়োজনীয় স্কিল না থাকায় বিদেশেও আশানুরূপ অভিবাসন পাচ্ছে না।
বিভাগীয় কমিশনার জানান, অর্থনৈতিকভাবে দেশের উত্তরের বিভাগ রংপুরের চিত্র খুব নাজুক। এখানকার স্কিলড শ্রমিকদের ঘাটতিতো রয়েছেই, তার সাথে সম্পূরক সমস্যা এ অঞ্চলের মানুষের গৃহ কাতরতা। সারাদেশের পরিসংখ্যান বিবেচনায় রংপুরে অভিবাসীর সংখ্যা খুব কম। এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রয়োজন। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার লক্ষ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহে অভিবাসনের জন্য সহায়ক ভাষা যেমন- চাইনিজ, কোরিয়ান, জাপানি, আরবিসহ অন্যান্য ভাষা শিক্ষা কোর্স চালু করা দরকার।
এই মতিবিনিময় সভায় রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত কর্মর্র্তাগন ও বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষগণ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় উপস্থিতিদের মতামতের ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে সভার সভাপতি বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) বিদেশি ভাষা (কোরিয়ান, চাইনিজ, জাপানি, আরবি ইত্যাদি) শিক্ষা কোর্স চালুর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক)-কে আহ্বায়ক করে ২২ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে রংপুর বিভাগের টিটিসি সমূহে কোন কোন ভাষা চালু করা যায় তার সম্ভাব্যতা নিরূপণ, বিদ্যমান অবকাঠামো ও অন্যান্য সুবিধা পরীক্ষাকরণ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা নির্মাণ বা সৃজনের আবশ্যকতা যাচাই পূর্বক আগামী ৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।