গ্রামবাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য উঠান ঢেঁকি আজ হারাতে বসেছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামবাংলার প্রতিটি পরিবারের মা ও বোনদের উঠানে বা বাড়ির আঙ্গিনায় আর জাতা বা ঢেঁকি দ্বারা ধানে পাড় দিয়ে ধান ভানতো।
কিন্তু সেই প্রাচীন ধারা ধান ভানার প্রচলন আর নেই বললেই চলে। ওই উঠান ঢেঁকিতে শুধু ধান মাড়াই নয়, হলুদ-মরিচ সহ বিভিন্ন মশলা বাটাও করা হতো।
এ উঠান ঢেঁকিটিতে একজনই দাড়িয়ে ধান মাড়াই করতে পারতো। আবার এই ঢেঁকিটি ছোট আকারে তৈরী করে সেটি দিয়ে পান বা বিভিন্ন মসলা বাটার কাজও করা হতো। সেটি হাম্বল দিস্তা হিসেবেই পরিচিত। তবে হাম্বল দিস্তাটি একটু বড় এবং এর লাঠিটি একটু লম্বা হতো। যাতে মেয়েরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ব্যবহার করতে পারে।
এরপর একটু আধূনিক ছোঁয়ায় আসে পাত ঢেঁকি বা পা দিয়ে ব্যবহার করা ঢেঁকি। বতমানে উঠান ও পাত ঢেঁকি উভয় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যদিও গ্রামে-গঞ্জে কোন কোন স্থানে পাত ঢেঁকি বা পা দিয়ে মাড়াই করা ঢেঁকি দেখা পাওয়া যায়। তবে তা খুবই বিরল। আধূনিক মাড়াই যন্ত্রের ভিরে ওইসব প্রাচীণ কালের মাড়াই যন্ত্র বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে।
তবে উঠান ঢেঁকি সম্প্রতি শেরপুর জেলা শহরের রঘুনাথ বাজার এলাকায় একটি হিন্দু বাড়ির বিয়ের গায়ে হলুদ এর অনুষ্ঠানের জন্য হালুদ বাটায় ব্যবহার করা হয়েছে। এসময় বিয়ে বাড়ির গাঁয়ে হলুদ দিতে আসা নারীরা বেশ মজা করে হলুদ বেটে বরের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান পালন করেন।
এ বিষয়ে ওই বরের বড় ভাই পরিবহন ব্যবসায়ী শুভ্র রায় জানায়, আধূনিক যুগে ঢেঁকির প্রচলন না থাকলেও আমার বাড়ির মেয়েরা অনেক খুঁজে পাত ঢেঁকি না পেয়ে ওই উঠান ঢেঁকি বা হাম্বল দিস্তাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে বিয়ে বাড়িতে বাড়তি আনন্দের যোগ হয়।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আমরা আজ আধূনিকতার ছোঁয়ায় বাপদাদাদের প্রথা বা রীতিনীতি হারিয়েই ফেলছি তাই কিছুটা হলেও সেই পুরোনো কৃষ্টি পালনে এ উদ্দোগ নেয়া হয়েছে।