আমরা নতুন কিছু দেখার বা পাবার আশায় উন্মুখ চিরকাল। আর তা যদি হয় হাতের কাছে তবে সব কিছু ভূলে ছুটে যাবার তাগিদ মনকে তাড়া দেয়। এমনই এক জায়গার নাম নেওয়াবাড়ি সোনাঝুড়ি। ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেষা সোনঝুড়ি হতে পারে এবার ঈদ আনন্দের সঙ্গি। প্রকৃতির উজাড় করা সৌন্দর্যের মহিমায় উদ্ভাসিত একটি গ্রামীণ জনপথ। চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। সম্প্রতি আরো সরকারের করা সীমান্ত সড়ক নির্মাণে যেনো ঈদ আনন্দ মুখুর হবে। শ্রীবরদী উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত ‘নেওয়াবাড়ী সোনাঝুড়ি’ এলাকাটি সমতল ভূমি থেকে ৪০ ফুট উঁচুতে। এটি একটি টিলার উপরে অবস্থিত।
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের চূড়ায় নেওয়াবাড়ি সোনাঝুড়ি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরুপ লীলাভূমি। এ টিলায় রয়েছে প্রায় ৭০হেক্টর ভূমি। এর চূড়ায় দাঁড়ালে দেখা যায় চোখ ধাঁধানো মনোমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ। জনশ্রুতি আছে এখানে অনেক আগেই একটি বাড়ি ছিল। এ বাড়ির নাম ছিল নেওয়াবাড়ি। সেই থেকেই এ টিলার নামকরন হয় নেওয়াবাড়ির টিলা। তবে এখন আর বাড়ি নেই। আছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন প্রজাতির লতা (স্থানীয় ভাষায় ‘নেওয়া’) ও বৃক্ষ। এ কারণেই টিলাটি নেওয়াবাড়ি টিলা হিসেবে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। পরে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের প্রস্তাবিত নাম পায় ‘নেওয়াবাড়ী সোনাঝুড়ি’। ময়মনসিংহ বন বিভাগের বালিজুড়ি রেঞ্জের আওতায় এ টিলা। এখানে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা গাছ ভূমি দস্যুরা চুরি করে কেটে ন্যাড়া করে দেয়। আশির দশকে গড়ে ওঠে উডলট বাগান। এ টিলার চারদিকে স্থানীয় বাঙালি মুসলমানদের পাশপাশি বসবাস করে গারো, কোচ, হাজং, বানাই গোত্রের লোকজন। এদের সকলের মধ্যে রয়েছে ভ্রাতৃত্ত্ব, সম্প্রীতি ও সহমর্মিতা। টিলার দণি পাশে রয়েছে ছোট পাহাড়ি ঝরনা। কোথাও গহীন জঙ্গল। আবার কোথাও কোথাও দেখা যাবে ন্যাড়া পাহাড়। আরো দেখা যাবে ওপারে সীমানা কালো সূর্যোদয় ও সূযার্স্ত দর্শন। পায়ে হেটে চারদিকে ঘুরে বেড়ানোর জন্য রয়েছে মনোরম পাহাড়ি পরিবেশ। পাহাড়ের বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে আকাশ মনি, বেলজিয়াম, ইউক্যালিপটাস, রাবার গাছ, ওষুধী গাছ ও কড়ই ছাড়াও নানা জাতের লতাগুল্ম আর বাহারি গাছ গাছালিতে সৌন্দর্যমন্ডিত সবুজের সমারোহসব মিলিয়ে ভ্রমন পিপাসীদের আকর্ষণ করার জন্য সব উপাদান ছড়িয়ে আছে এই জায়গায়। বিশেষ করে এ টিলার পাহাড়ে উঠে এলে দূরের আকাশকেও কাছে মনে হয়। সবুজ ও হালকা নীলের নৈসর্গিক এই দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
যেভাবে আসবেন : শেরপুর জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে এ টিলার অবস্থান। এখানে আসতে হলে নিজস্ব যানবাহন বা সিএনজি যোগে জেলা শহরের শাপলা চত্বর থেকে শ্রীবরদী পৌর শহর হয়ে বালিজুড়ি রেঞ্জ অফিসে আসতে হবে। রেঞ্জ অফিসের পশ্চিম পার্শ্বেই এ টিলার অবস্থান।
কোথায় থাকবেন: শ্রীবরদী উপজেলা সদরের ডাক বাংলোতেও থাকতে পারেন। এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি লাগবে। এছাড়া শেরপুর জেলা সদর ও আশপাশে বেশ কয়েকটি খাওয়ার হোটেল ও থাকার জন্য মোটামুটি ভালো মানের গেষ্ট হাউজ বা আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেখানে নিশ্চিন্তে রাত্রিযাপন করা যাবে। তবে পাহাড়ি পরিবেশে থাকতে চাইলে নেওয়াবাড়ি টিলা থেকে ৫কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে বনফুল নামে একটি মনোমুগ্ধকর আবাসিক হোটেল।
সর্তকতা: নেওয়াবাড়ির টিলার আশপাশের পাহাড়ি এলাকার সন্নিকটেই ভারতীয় সীমান্ত। তাই পাহাড়ের ভেতর দিয়ে বেশি দূর এগোনো ঠিক হবে না। তাছাড়া সন্ধ্যার পর পাহাড়ের ভেতরে অবস্থান করাও ঠিক হবে না। কারন এ অঞ্চলে বন্যহাতির উপদ্রব রয়েছে।