এবারের কুরবানির ঈদে শেরপুরের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো ৩২ মণ ওজনের ষাঁড় ‘চিরকুমার’। বিক্রি হয়নি অস্ট্রেলিয়ান হলস্টেল ফ্রিজিয়ান জাতের আলোচিত এই ষাঁড়টি। কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি, তাই বিক্রিও হয়নি আর এতে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে খামারি ইব্রাহিম মিয়া।
সদর উপজেলার বাজিতখিল ইউনিয়নের কুমরী মুদিপাড়ার এই খামারি চার বছর আগে ৯৭ হাজার টাকায় ষাঁড়টি কিনেছিলেন। বর্তমানে ষাঁড়টির ওজন প্রায় ৩২ মণ। অনেক দিন ধরে লালন-পালন করা এই ষাঁড়ের নাম রেখেছেন তিনি চিরকুমার। দাম চাওয়া হয়েছিল ১০ লাখ টাকা।
ইব্রাহিম মিয়া বলেন, অনেক আশায় বুক বেঁধে আরও এক বছর পালার পর এবারও চিরকুমারকে বিভিন্ন হাটে তুলেছিলাম। তখন ভালো দাম না পাওয়ায় বেচতে পারিনি। গতবার হাটে তোলার সময় চিরকুমারের ওজন ছিল ২০ থেকে ২২ মণ। প্রতিদিন তাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার খাবার খাওয়াতে হয়। ভুসি, খড়, ঘাস দিই। দুই-তিনবেলা গোসল করানো হয়।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আর বড় ষাঁড় পালতাম না। এবার হাটে তুলেও কারও কাছ থেকে উপযুক্ত দাম করতে শুনিনি। ছোট আর মাঝারি গরুর প্রতি চাহিদা বেশি। শখ করে পালছিলাম। এখন তো মেলা বিপদে পড়েছি। বয়স ও ওজন দুইটাই বাড়তি। ষাঁড়টারে নিয়া খুব চিন্তায় আছি। পালার মতো আমার আর ধৈর্যও নাই, টাকাও নাই। এখন পালা খরচও মেলা। আমি কৃষক মানুষ কেমনে কী করি।’
sherpur picতিনি আরও বলেন, খামারে আইসা একজন দাম করছিল ৬ লাখ টাকা। তখন অনেক চিন্তা কইরা বেচি নাই। কারণ আমার তো তাকে পালতেই খরচ হয়েছে ৮ লাখ টাকার মতো।
জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর শেরপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার ৪৬৫টি। প্রস্তুত করা হয়েছিল ৮৪ হাজার ৪১৭টি। ক্রেতারা হাটে গিয়ে এবার স্বাচ্ছন্দ্যে কোরবানির পশু কিনতে পেরেছেন। এছাড়াও বাইরের পশু না আসায় বেচাকেনাও ভালো হয়েছে। আমরা হাটের পাশাপাশি অনলাইনেও পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা রেখেছিলাম। কিন্তু হাটগুলোতে মাঝারি আকারের পশু বেচাকেনা বেশি হয়েছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৭টি কোরবানির হাট ও ৬টি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ছিল।
তিনি আরও বলেন, একজন খামারির জন্য ষাঁড় বিক্রি করতে না পারার বিষয়টি হতাশাজনক। সাধারণত গরু ১০ বছর পর্যন্ত লালন-পালন করা যায়, তবে এসব বড় ষাঁড়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকে। ষাঁড়গুলো অনেক বড় আর মোটা। তবে এ ধরনের বিশাল ষাঁড় সাড়ে চার বছর হলেই বিক্রি করে দেয়া ভালো। না হলে গরুর উচ্চ রক্তচাপসহ নানা সমস্যা হয়। তা ছাড়া আরও কিছুদিন লালন-পালন করলে যে ব্যয় দাঁড়ায়, শেষ পর্যন্ত খরচ ওঠানো নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়। এ অবস্থায় খামারির খরচ ওঠাতে বিকল্প কোনো পরিকল্পনা করা যেতে পারে।