টানা আট বছরের অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাছাই শেষ করে রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অর্থ বরাদ্দের ওপর মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চূড়ান্ত করা হবে। ঈদুল ফিতরের পর চূড়ান্ত তালিকা যে কোনো দিন প্রকাশ করা হতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
সূত্র জানায়, ঈদের আগে নতুন এমপিওভুক্ত দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে তোড়জোড় থাকলেও নানা বাস্তবতায় তা দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন এমপিওভুক্তির ঘোষণা ঈদুল ফিতরের আগে বা পরে যখনই হোক না কেন, শিক্ষকরা আগামী জুলাই মাস থেকে সুবিধা পাবেন তার।
২০১০ সালে সর্বশেষ এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এর পর থেকে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু করা হয়। তবে নতুন সরকার গঠনের পর পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এখনও চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে সারাদেশের প্রায় ছয় হাজার নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এ মুহূর্তে প্রহর গুনছেন প্রতীক্ষার।
নন-এমপিও শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দফায় দফায় আন্দোলনের পর তাদের দাবির মুখে গত আগস্ট মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির ঘোষণা দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদন নেয়। তখন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা আবেদন করে। এরপর প্রাথমিক যাচাইয়ে ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় দুই হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যোগ্য (ফিটলিস্ট) ভুক্ত হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বয়স, শিক্ষার্থী সংক্রান্ত তথ্য, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও পাসের হার, অবকাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় নম্বর পায় প্রতিষ্ঠানগুলো। সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের মধ্যে গ্রেডিং করা হয়। কিন্তু পরে আবেদন সরেজমিন যাচাই-বাছাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই প্রক্রিয়ায় ঝুলে যায় এমপিওভুক্তির কার্যক্রম। সম্প্রতি আসন্ন জাতীয় বাজেট কেন্দ্র করে এমপিওভুক্তি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘আমরা দ্রুত এমপিওভুক্তির ঘোষণা চাই। সরকারি প্রজ্ঞাপন দেখতে চাই। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। অনেকের চাকরির বয়স আছে আর মাত্র পাঁচ থেকে সাত বছর। এ কারণে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তি করে এই সমস্যার সমাধান করা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এত বছর পর কোনোক্রমেই মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আংশিক এমপিওভুক্ত করা কিছুতেই সমীচীন হবে না। আর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিলে অসুস্থ প্রতিযোগিতার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। এর সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়বেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির একটি সামগ্রিক স্বচ্ছ সমাধান চাই। প্রয়োজনে বর্তমান বাজেটে অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট না হলে শিক্ষকরা আপাতত কম বেতন নিতে রাজি আছেন। পর্যায়ক্রমে কয়েক বছরে পুরো বেতন সম্পন্ন করা হলেও আপত্তি নেই। তাই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল প্রতিষ্ঠানকেই একযোগে এমপিওভুক্তি করতে হবে।’
আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা আসছে কি-না? জানতে চাইলে গতকাল রোববার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘এমপিওভুক্তির ঘোষণা ঈদের আগে বা পরে যখনই হোক, জুলাই মাসে কার্যকর হবে এটা।’
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭ হাজার ৮১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা চার লাখ ৯৬ হাজার ৩৬২ জন। এ খাতে মাসে সরকারের ব্যয় হয় ৯৪২ কোটি টাকা। অন্যদিকে দেশে একাডেমিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে পাঁচ হাজার ২৪২টি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৮০ হাজার। একাডেমিক স্বীকৃতির বাইরেও আরও দুই হাজার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সূত্র: দৈনিক সমকাল