ইন্টারনেট ও ই-বুকের যুগেও প্রায় শত বছরের পুরোনো শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী ‘খান বাহাদুর ফজলুর রহমান সরকারী গণ গ্রন্থাগার’টি আজো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে আপন আলোয় । গন্থগার কৃর্তপক্ষ বই পড়ার পাশাপাশি নানা সেবা দিয়ে আসছে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে।
ঘরে বসে যেখানে হাতের মুঠোয় সারা বিশ্বের খবর বা তথ্য নেয়া যায় সেখানে শেরপুরের ইতিহাস সমৃদ্ধ বই এর মুওজুদের এ গন্থাগারটিতে এখনো ভিড় করে চাকুরির সন্ধানে বেকার তরুন-তরুনী, শিক্ষার্থী, কবি-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠক। তবে এ গণগ্রন্থাগারে রয়েছে সামান্য কিছু সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধান হলেই আরো বেশী বেশী পাঠক বই পড়াসহ নানা সেবা নিতে আসবে বলে জানালেন গন্থাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইব্রেরীয়ান।
জানাগেছে, ১৯২৬ সালে তৎকালীন জমিদার আমলে শহরের টাউন হলের পাশেই একটি কক্ষে ‘রিডিং ক্লাব’ নামে বেসরকারী ভাবে এ গন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৯৮৪ সালে জেলার তৎকালীন দানবীর মরহুম খান বাহাদুর ফজলুর রহমানের স্বজনরা এ গন্থাগারের নামে কিছু জমি দান করলে গ্রন্থাগারটি সেখানে স্থানান্তরিত করে নামকরণ করা হয় ‘খান বাহাদুর ফজলুর রহমান গণগ্রন্থাগার’। এরপর ১৯৯১ সালে গ্রন্থাগারটি সরকারীকরণ করা হলে পুনরাই এর নামকরণ করা হয়, ‘খান বাহাদুর ফজলুর রহমান জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগার’। পরবর্তিতে ওই জমির উপর সরকারী ভাবে ৩ তলা ফাউন্ডেশন করে এক তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মান করে গ্রন্থাগারটিতে রিডিং রুম, বই ও পত্রপত্রিকাসহ নানা সুযোগ এবং সেবা প্রদানের মাধ্যমে নতুন করে যাত্রা শুরু করা হয়।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৬ টা পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেনীর পাঠক নিয়মিত পাড়াশোনা করছে এ গ্রন্থাগারে। বর্তমানে এ গ্রন্থাগারে প্রায় ৪০ হাজার বই সংগ্রীত রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে একটি জব কর্নার। এখানে শিক্ষিত বেকার তরুন-তরুনীরা নিয়মিত জব কর্নারে আসছে বিভিন্ন জ্ঞানকোষ বই পড়তে।
এছাড়া ফ্রি ইনটারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহের কম্পিউটার কর্নার, ১৩ টি বাংলা ও ২ টি ইংরেজী জাতীয় প্রত্রিকা ১২ টি বাংলা সাময়িকী ও ৩টি ইংরেজী সাময়িকী পড়ার সুযোগ। বেসরকারী গ্রন্থাগারের জরিপ ও নিবন্ধন প্রদান, তথ্য অনসন্ধান, রেফারেন্স, পরামর্শ, বিভিন্ন সাহিত্য ও বই পড়া প্রতিযোগীতা, সেমিনার, আলোচনাসভাসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ ধরনের সেবা প্রদান করা হয়।
বর্তমানে এখানে নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা রয়েছে ৫০১ জন। এদের পাশপাশি আরো অনেক শ্রেনী পেশার মানুষ বিশেষ করে শিক্ষার্থী, চাকুরি প্রত্যাশি, অবসরপ্রাপ্ত এবং চলমান চাকুরিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকরা এই ইন্টারনেটের যুগে কাগজের বই বা পত্রিকা পড়তে ভির করেন। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এ গ্রন্থাগারে এসে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৫ হাজার ৮৯৫ জন রেফারেন্স সেবা এবং গ্রন্থাগার সেবা গ্রহন করেছে মোট ৭০ হাজার ১৫৮ জন পাঠক। এছাড়া ইন্টারনেট সেবা পেযেছেন ১ হাজার ১০০ জন। সেবার পাশাপাশি এ গ্রন্থাগার থেকে ২২ টি বেসরকারী পাঠাগারের নিবন্ধন দেয়া হয়েছে।
এ গণগ্রন্থাগার সূত্রে জানাগেছে, পূর্বে পাঠকদের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ চলে গেলে এখানে কোন জেনারেটর না থাকায় কয়েক বছর পূর্বে একটি সৌর প্যানেল বসানো হয়। কিন্তু ওই সোলার প্যানেলের আইপিএসটি বেশ কয়েকবার বিকল হলে তা সংস্কার করা হয়। তবে বর্তমানে আবারও সেটি বিকল হয়ে রয়েছে। কিন্তু গ্রণগ্রন্থাগারে সে আইপিএস সংস্কার করার কোন তহবিল না থাকায় সেটি এখন আর ঠিক করা সম্ভব হচ্ছেনা বিধায় বিদু্যূৎ চলে গেলে অন্ধকারে থাকতে হয়।
এছাড়া গ্রন্থাগারের প্রবেশ পথে অর্থাৎ প্রধান ফটকের সামনেই গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএসজি স্টেশন এবং পৌরসভার ময়লা ফেলার ড্রাস্টবিন। ফলে একদিকে শব্দ দূষন এবং অপরদিকে বায়ু দুষনের কারণে গ্রন্থাগারে আগত পাঠকদের নানা ভোগান্তি পেহাতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে লাইব্রেরিয়ান সাজ্জাদুল করিম জানায়, জ্ঞানার্জনের জন্য শেরপুরের এ গণগ্রন্থাগারটি খুবই সমৃদ্ধ এবং এখানে পর্যাপ্ত বই থাকায় ই-বুক বা ইন্টারনেটের যুগেও এখানে দিন দিন পাঠকসংখ্যা বাড়ছে। তবে গ্রন্থাগারের প্রবেশ পথের সিএনজি স্টেশন ও ময়লার ড্রাস্টবিনটি’র জন্য পাঠকদের অসুবিধা হচ্ছে। তবে বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে অবগত করেছি। আশা করি এর সমাধান হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প বিদ্যুতের জরুরী প্রয়োজন। সে বিষয়েও আমি উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে অবগতি করেছি।
গণগ্রন্থাগারের বিষয়ে জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব বলেন, এই ইন্টারনেটের যুগেও যে এ গ্রন্থাগারে পাঠকরা এসে বই পড়ে এটা খুবই ভালো দিক। এছাড়া এখানে পর্যাপ্ত বই রয়েছে। গ্রন্থাগারের যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলো আমার নজরে এসেছে। এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে।