এ এম আব্দুল ওয়াদুদ
মা-বাবা সন্তানের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে বিশেষ এক নেয়ামত।সন্তান মায়ের নাড়িকাটা ধন।সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগের কোন তুলনা হয় না।সন্তানকে গর্ভে ধারণকালীন ও প্রসবকালীন মায়ের কষ্ট বর্ণনাতীত।তাইতো আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইবাদত করার হুকুম করার সাথে সাথে মা-বাবার হক আদায়ের হুকুম করেছেন।
সম্পূর্ণ অসহায় অবস্থায় মানব শিশু জন্মগ্রহণ করে পৃথিবীতে।মা-বাবা পরম মমতায় অতিযত্নে লালন পালন করে বড় করে তুলেন তাঁদের সন্তান।
সন্তান যেনো মা-বাবার প্রতি তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা না ভুলে জান সেজন্য কুরআন ও হাদীসে মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বলা হয়েছে।
আজ ইসলামের দৃষ্টিতে মা-বাবার প্রতি সন্তানের কি কি দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِن تَكُونُواْ صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلأَوَّابِينَ غَفُورًا
আয়াতের অর্থ:
‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন,তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের সঙ্গে উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)।
মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার সম্পর্কে হাদীসে আছে যে,
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার?’ তিনি বললেন ‘তোমার মা’; সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’; সে আবারও বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে পুনরায় বলল, ‘এরপর কে?’ তিনি বললেন, ‘তোমার পিতা’। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ)।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের চেয়েও মায়ের খেদমত করা বেশি গুরুত্ব
দিয়েছেন স্বয়ং রাসূল (সাঃ)
এই বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রাসুলের ঘটনা থেকে জানা যায়। ঘটনাটি হচ্ছে যিনি প্রিয় নবীজি (সা.)-কে দেখেননি।সেই আশেকে রাসুলের নাম হজরত ওয়াইস আল করনি (রা.)। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর জমানায় থেকেও তিনি সাহাবি হতে পারেননি মায়ের সেবা করার কারণে। তবে এতে করে তাঁর মর্যাদা কমেনি; বরং তিনি সম্মানিত হয়েছেন। একবার ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’ শুধু তা-ই নয়, নবীজি (সা.) তাঁর গায়ের একটি জুব্বা তার জন্য রেখে যান এবং বলেন, ‘মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি; আমার ইন্তেকালের পর আমার এ জুব্বাটি তাকে উপহার দেবে।’ নবীজি (সা.) জুব্বাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.)-এর কাছে এবং তিনি বলেন, ‘হে ওমর! ওয়াইস আল করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিয়ো।’
মা-বাবার পার্থিব অর্থ সম্পদ যাতে বেশি পাওয়া যায় আমরা সে চেষ্টা করি কিন্তু এর থেকেও যে মহা মূল্যবান ও চিরস্থায়ী সম্পদ মা-বাবার সন্তুষ্টির মাধ্যমে অর্জন করা যায় সেকথা আমরা কয়জনে জানি বা তা অর্জনের চেষ্টাই কি আমরা করি প্রশ্নটা না হয় নিজেকেই করি একবার!
প্রিয় নবী (সাঃ) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়ের পদতলে’। (মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) মায়ের মর্যাদা কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, জান্নাত মায়ের পদতলে। পিতার মর্যাদা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, পিতার সন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টির ওপর আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করে।
সন্তান যদি একনিষ্ঠতার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করার পাশাপাশি মা-বাবার সেবাযত্ন এবং উত্তম আচরণ করে; তবে সে দুনিয়া ও পরকালে মহাসফলতা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি মা-বাবার হক আদায়ের প্রতি যত্নশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখকঃশিক্ষার্থী
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।