দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপত্র বিক্রি মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) শেষ হয়েছে। গত চার দিনে মোট বিক্রি হয়েছে ৩৩৬২টি। গড়ে প্রতি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১১ জনের বেশি। মনোনয়নপত্র বিক্রি করে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
বিভাগ অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ঢাকায়-৭৩০টি। অন্য বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামে ৬৫৯টি, রাজশাহীতে ৪০৯টি, খুলনায় ৪১৬টি, রংপুরে ৩০২টি, ময়মনসিংহে ২৯৫টি, সিলেটে ১৭২টি ও বরিশালে ২৫৮টি। এবারই প্রথম অনলাইনে মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে আওয়ামী লীগ। অনলাইনের মাধ্যমে মোট ১২১টি বিক্রি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার শেষ দিনে মনোনয়নপত্র বিক্রির চেয়ে জমা পড়েছে বেশি। বিকেল ৫টার পরিবর্তে জমাদানের সময় বাড়িয়ে রাত ১২টা করা হয়েছে।
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ চলছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মাঝে, যা গড়িয়েছে পারিবারিক পর্যায়েও। একই পরিবারের হলেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
পাবনা-৪ আসনে নৌকার মাঝি হতে প্রয়াত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ওরফে ডিলুর পরিবারের ৬ জন ফরম কিনেছেন। তারা হলেন বড় ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গালিবুর রহমান শরীফ, মেজো ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাকিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহজেবিন শিরিন, জামাতা (মাহজেবিনের স্বামী) ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, খালাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বশির আহম্মেদ ও ভগ্নিপতি (খালাতো বোনের স্বামী) উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা।
ময়মনসিংহ-৬ আসনে মনোনয়ন চান বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, তার ছেলে ইমদাদুল হক সেলিম ও মেয়ে সেলিমা বেগম। সেলিম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এদিকে মোসলেমের ছোট মেয়ে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক।
ঢাকা-৭ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তার দুই ছেলেও ফরম সংগ্রহ করেছেন। বড় ছেলে সোলায়মান সেলিম ও ছোট ছেলে ইরফান সেলিমও নৌকার মনোনয়নপত্র কিনেছেন। পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রে জানা গেছে, হাজি সেলিমের মামলা চলমান ও এ-সংক্রান্ত কিছু ঝামেলা রয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন না পেলে তার বড় ছেলে সোলায়মান সেলিমকে দাঁড় করাবেন।
কুষ্টিয়া-১ আসন থেকে ফরম কিনেছেন প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আফাজ উদ্দীন আহমেদের তিন ছেলে। বড় ছেলে নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস, মেজো ছেলে আরিফ আহমেদ বিশ্বাস ও ছোট ছেলে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে প্রার্থী হতে চান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশিষ ইসলাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসন থেকে ফরম কিনে জমা দিয়েছেন এক দম্পতি। তারা হলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. নাজির মিয়া এবং তার স্ত্রী নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার।
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও তিতাস) আসনের বর্তমান এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। পাশাপাশি তার ছেলে মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলীও একই আসনে ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) আসনে সপ্তমবারের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ দবিরুল ইসলামসহ তার ছেলে, মেজো ভাই, ভাতিজাসহ চারজন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরশাদ আদনান। পাবনা-৫ আসন থেকে নৌকা প্রতীক চান তিনি। শরীয়তপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হক। তিনি পুলিশ বাহিনীর উন্নয়নে আইজিপি থাকাকালীন ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছেন।
বর্তমান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।