খুব সরু চার রাস্তার মোড়। ডান পাশে বাড়ি, বাঁ পাশে বাড়ি। পেছনে গলি আর বাড়ি। সামনে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদ। গতকাল বুধবার রাতে আগুনের সূত্রপাত মসজিদের মূল গেটের সামনে থেকেই।
এ আগুনের লেলিহান শিখায় মসজিদের চারপাশের ৩০০ হাত এলাকার সব বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে ছাই। কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আগুনে পুড়ে যাওয়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে সুউচ্চ ভবনগুলোও। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু চুড়িহাট্টা জামে মসজিদ। জনমনে গভীর বিস্ময় জাগিয়ে মসজিদটি অক্ষত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
কৌতূহলী মানুষ আসছে, আর মসজিদটি দেখছে। কেউ কেউ বলছে, ‘এ মহান আল্লাহর অপার রহস্য।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মসজিদের নিচ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় একটি পিকআপ ভ্যান গাড়িতে থাকা সিলিন্ডার গ্যাস থেকে। যা পরে বিস্ফোরণ হয়ে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারে লাগে। সেখান থেকে দোকানে থাকা কেমিক্যালে লেগে যায় আগুন। মুহূর্তের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো চকবাজারের এ সরু গলিতে। এরপর শুধু হাহাকার, আর্তনাদ আর লাশ। কিন্তু বিস্ময়কর চুড়িহাট্টা মসজিদের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
এলাকার আবদুর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, মসজিদের নিচে পিকআপ ভ্যানে থাকা সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে পুরো চুড়িহাট্টা এলাকায় আগুনের লেলিহান শিখা।
মসজিদের মোতোয়ালি আবদুর রহমান বলেন, এটি একটি বিস্ময়কর ঘট্না। আল্লাহর ঘর আল্লাহ রক্ষা করেছেন। মসজিদের কোনো ক্ষতি হয়নি।
এলাকার বাসিন্দা সেলিম মিয়া বলেন, ‘এটি অবিশ্বাস্য। আল্লাহর অপার করুণা। মসজিদের নিচে থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কিন্তু আল্লাহর রহমতে মসজিদের কিছুই হয়নি।
চকবাজারের নন্দকুমার সড়কের চুড়িহাট্টায় বুধবার রাতে এই শাহী মসজিদের সামনে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটির ট্রান্সফরমার বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তেই আগুন লাগে জামাল কমিউনিটি সেন্টারে। আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল যে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের চারতলা ওয়াহিদ ম্যানশনে। ভবনটির প্রথম দুইতলায় প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিকের দানা ও রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদাম থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের আরো চারটি ভবনে। পাশের কয়েকটি খাবারের হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারেরও বিস্ফোরণ ঘটে। পুড়ে যায় সড়কে থাকা একটি প্রাইভেট কারসহ কয়েকটি যানবাহন। এ সময় পুড়ে যাওয়া কয়েকটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। রাজধানীর প্রায় সবকটা ইউনিট কাজ করে আগুন নেভাতে। খুবই ঘন বসতি এবং রাস্তা সরু হওয়ায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।