আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া নিয়ে যে গুজব নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিরাজ করছে তা শনিবার কিংবা রোববারের মধ্যে অবসান হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিট কে পাবে, কে পাবে না, সে বিষয়ে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বিক্রির শুরু থেকে তৃর্ণমূলে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। তারা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং ও গণসংযোগ করছে প্রতিনিয়ত। তবে নির্বাচনী আচারণ বিধি মাথায় রেখেই করছেন এসব অনুষ্ঠান। কয়েকটি আসন ছাড়া সব কয়টি আসনেই একাধিক মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। গত কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদ পত্রে কয়েকটি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন প্রার্থীর নামের তালিকা প্রকাশ করে আসছে। কারা থাকছেন, কারা বাদ পড়ছেন। সে সব তথ্য দেয়া হয়েছে ওইসব প্রতিবেদনে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মনোনয়ন নিয়ে যেসব নিউজ প্রকাশিত হয়েছে, সে গুলোর কোনো ভিত্তি নেই। আমরা দলের পক্ষে এখনও মনোনয়ন দেইনি। জোটগতভাবে মনোনয়ন দেয়া হবে। যারা দাবি করছেন বা মনোনয়ন পেয়েছেন বা বাদ পড়েছেন বলে নিউজ আসছে, সব ভুয়া। আমরা কাউকে মনোনয়ন দেইনি, দিয়েছে মিডিয়া। পত্রিকায় প্রকাশিত আওয়ামী লীগের মনোনয়নের তালিকা মনগড়া। কাউকে মনোনয়নের নিশ্চিয়তা দেয়া হয়নি।
সূত্র মতে, কয়েক দফা বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন তালিকা চূড়ান্ত করছে। শরিকদের সাথেও আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। তবে নিজ দলের মনোনয়ন চূড়ান্ত নিয়ে বেশ টেনশনে কেটেছে আওয়ামী লীগের। হাতে গোনা কয়েকটি আসন নিয়ে এখনও সমস্যায় রয়েছে দলটি। বর্তমান এমপিদের বাদ দিয়ে নতুন মুখকে মনোনয়ন দেয়ার গুজব নিয়ে চলছে ভিন্ন রকম রাজনীতি। দলের ভেতরে ভেতরে চলছে বিরোধ। এসব নির্বাচনী আসনগুলোতে প্রার্থীতা নিশ্চয়তার পরই দেখা দিতে পারে বিশৃঙ্খলা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দু’হাত তুলে বিদ্রোহী প্রার্থী না হওয়ার ওয়াদা দিলেও চূড়ান্তের পর তা কতটুকু ওয়াদাবদ্ধ থাকতে পারবে এ নিয়েও চিন্তিত ক্ষমতাসীন দল।
তূণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন মিডিয়া যেসব নেতাদের নাম এসেছে। সেই তালিকায় যারা আছেন এবং যারা বাদ পড়ছেন। সেই তালিকায় বাদ পরা নেতাদের মধ্য অনেকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি সেই তালিকা সত্যি প্রকাশ করে তাহলে সেই আসনগুলোতে নির্বাচনে নৌকা ডুববে বলে জানান তারা। আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাটিগুলোতে বিএনপির আদলে চলে যাবে। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও নৌকা বিজয়ী করতে যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে মনোনয়ন চায় তৃর্ণমূল।
তবে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৬টি আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত নিশ্চিত করে বলেন, জরিপে এগিয়ে থাকলেও বিতর্কের কারণে কক্সবাজারের আব্দুর রহমান বদি ও টাঙ্গাইলের আমানুর রহমান খান রানাকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে না। কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে বদির জায়গায় তার স্ত্রী শাহীনা আক্তার চৌধুরী মনোনয়ন পাচ্ছেন। আর টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে রানার জায়গায় মনোনয়ন পাচ্ছেন তার বাবা আতাউর রহমান খান। মাশরাফি নড়াইল-২ আসনেই নির্বাচন করবে। ওখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির ছিল। উনি এই আসনটি জোটের জন্য সেক্রিফাইস করেছেন।
এছাড়া ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুটি আসনে নির্বাচন করবেন। একটি টুঙ্গিপাড়া আরেকটি পীরগঞ্জ আসনে। দলের বাকি সবাই একটি আসনে নির্বাচন করবে। আমি এবার নোয়াখালী-৫ আসনে নির্বাচন করবো’ বলেও জানান এ আওয়ামী লীগ নেতা।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্টের মতো শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলতে গণভবনে সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী সাহেব গিয়েছিলেন। তিনি আসন ভাগাভাগি নিয়ে কথা বলেছেন।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, টানা দুই মেয়াদে দল ক্ষমতায় থাকায় বর্তমানে যারা এমপি রয়েছেন তাদের কারো কারো মধ্যে নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, জনবিচ্ছিন্ন, নেতাকর্মীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাড়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট আছে। নানাভাবে নেত্রী তথ্য সংগ্রহ করছেন। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি সিদ্ধান্ত নিবেন।