ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, পাহাড় কাটা যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে। পাহাড়ে আর একটি কোপও নয়। পাহাড় রক্ষায় কোনো ছাড় নয়। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সিটি করপোরেশনকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকার একটি হোটেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও এলআরডির যৌথ আয়োজিত চট্টগ্রামের পাহাড় কাটা বিপর্যয় রোধে করণীয়বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় ল্যান্ড জোনিং কার্যক্রম শুরু করেছে। কোন পাহাড় কী অবস্থায় আছে তা নির্ধারণ করে পাহাড় রক্ষা করতে হবে। আমি ক্লিয়ারলি বলতে চাই পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একটা ভবন ভেঙে গেলে তা নির্মাণ করা সম্ভব। একটি খাল ভরাট হয়ে গেলে সেটাও খনন করা সম্ভব। কিন্তু পাহাড় বানানো সম্ভব নয়। পাহাড়, নদী ও সমুদ্রের মিলন চট্টগ্রাম–এই প্রবাদ আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
এসময় বেলার প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চট্টগ্রামে এখনও পাহাড় কাটা চলমান। দিনে অভিযান চালানো হলে রাতে পাহাড় কাটা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পাহাড় কাটায় নারী শ্রমিক ব্যবহার করা হয়। পাহাড় রক্ষায় আমরা দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করেই যাচ্ছি। আদালতের আদেশ কেউ মানছে না।
তিনি এই বিষয়ে ভূমিমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, আমরা এই সভায় আপনার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আশা করি। পাহাড় কাটায় শাস্তি হয় না। এটা প্রতিষ্ঠিত। পাহাড় কাটায় তাৎক্ষণিক শ্রমিকদের গ্রেপ্তার করা হয়। মালিকরা ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। এই অবস্থা থেকে আমাদের উত্তোরণ ঘটাতে হবে।
সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কামাল হোসাইন। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, এক সময় এ নগরীতে ছোট বড় প্রায় ২০০টি পাহাড় ছিল। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচটি থানা (বায়েজিদ, খুলশী, পাঁচলাইশ, কোতোয়ালি ও পাহাড়তলি) এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২.৩৭ বর্গকিলোমিটার। ২০০৮ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৪.২ বর্গকিলোমিটারে। বিগত ৩২ বছরে ১৮.৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে, যা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ। সর্বশেষ বিদ্যমান পাহাড়গুলোও নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড় (গরিবুল্লাহশাহ হাউজিং এর মুখে), ষোলশহর, ফয়েজ লেক, শেরশাহ, আরেফিন নগর, আকবরশাহ, ফিরোজশাহ, জালালাবাদ, কুলগাঁও এবং উপজেলার মধ্যে সীতাকুন্ড, বাঁশখালীর চাম্বল সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বিভিন্ন স্থানে চলছে পাহাড় কাটা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছি। জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন অধিকাংশ পাহাড় দখল মুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি প্রফেসর মু সেকান্দার খান, ডিআইজি অফিসের ইন্টালিজেন্ট বিভাগের পুলিশ সুপার সফিুজুল ইসলাম,এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, চবি প্রাক্তন অধ্যাপক শফিক হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।