শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের শালচূড়া গ্রামের অতিদরিদ্র সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী আহমেদ হোসেন এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ভর্তির জন্য ২৫ হাজার টাকা জোগার করতে না পারায় তাঁর স্বপ্ন ব্যর্থ হতে চলেছে। আগামি ৭ নভেম্বর ভর্তির শেষ দিন। তাই ভর্তির টাকা সংগ্রহের জন্য তিনি এখন চরম দুশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। মেধাবী আহমেদ হোসেন এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
আহমেদের বাবা সিদ্দিকুর রহমান একজন মোটরশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকায় বর্তমানে তাঁর রোজগারের কোন ক্ষমতা নেই। বাড়ি-ভিটার ১০ শতাংশ জমি ছাড়া সিদ্দিকুরের কোন ধানি জমিও নেই। তাই আহমেদের মা জয়নব বেগম বাড়ির পাঁচ শতাংশ জমিতে নার্সারি (গাছের চারার বাগান) করে যে সামান্য উপার্জন করেন তা দিয়েই সংসার চালান। মায়ের এই কাজে ছোট বেলা থেকেই সাহায্য করছেন বড় ছেলে আহমেদ হোসেন। আহমেদের ছোট ভাই জাহিদ হাসান ও বোন শিলামণি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে যথাক্রমে অষ্টম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ালেখা করছে। আর্থিক-অনটনের কারণে আহমেদ মাঝে-মধ্যে প্রাইভেট টিউশনি করে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার খরচ জুগিয়েছেন। ঝিনাইগাতীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা শাহিন মিয়াও তাঁর (আহমেদ) পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছেন।
মেধাবী ছাত্র আহমেদ হোসেন ২০১৬ ও ২০১৮ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। মেধা তালিকায় তার অবস্থান ১৭০। ফলে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। একটি ভাল বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও তিনি শংকায় রয়েছেন। আগামি ৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির শেষ দিন। ভর্তির জন্য প্রয়োজন ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু অসুস্থ দরিদ্র পিতা আর অসহায় মায়ের পক্ষে ছেলে আহমেদের ভর্তি বাবদ এত টাকা প্রদান করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই তিনি (আহমেদ) সমাজের সহƒদয়বান ব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার ভর্তির টাকা জোগার করতে।
আহমেদ উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরির মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবা করতে চান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে পারলে তার সে স্বপ্ন ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাকে হয়তো জীবিকার তাগিদে বাড়ি ফিরে আসতে হবে।
আহমেদ হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে শেরপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমার খুব ইচ্ছে পড়ালেখা করে বড় হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবো। সেইসঙ্গে ভাল চাকরি করে সংসারের অভাব দূর আর আমার মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য সেবা করবো। কিন্ত শুধু অর্থাভাবে আমার স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে এসে আটকে গেলাম। আমাকে যদি সমাজের সহৃদয়বান ব্যক্তিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ করে দেন তাহলে আমার সে স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হব। চিরঋণী থাকবো সবার কাছে।’ আহমেদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের মুঠোফোন নম্বর: ০১৯৯৫১৭০৩৫৬।