প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলেই দেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যায়। আমরা তা প্রমাণ করেছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক। কারণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকলে দেশ উন্নত হয় না, বরং মানুষ বঞ্চিত ও নির্যাতনের শিকার হয়। এটা বার বার এ দেশে প্রমাণিত হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য নূরজাহান বেগমের সম্পুরুক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, একজন নারী দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আদালতের রায়ে জেলে রয়েছেন। মামলাটি আমরা করিনি। রাজনৈতিক কারণে মামলা করলে আমরা ২০১৪-১৫ সালেই তাকে গ্রেফতার করতে পারতাম। মামলাটি প্রায় দশ বছর ধরে চলেছে। বিএনপির এত জাদরেল আইনজীবী কেউই আদালতে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলেন না। আর এতে প্রমাণিত হয় তিনি অপরাধী।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির নেতারাও সেটা জানতেন বলেই মামলার রায়ের আগেই দলের গঠনতন্ত্রের সাত ধারা সংশোধন করে দুর্নীতিবাজ, অপরাধী ও দণ্ডিতদের নেতা হওয়ার সুযোগ রাখা হলো কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রেখেছি বলেই দেশে এতো উন্নতি হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা না থাকলে নারীরা নির্যাতিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর মতো নারীদের ওপর নিষ্ঠুর ও পাশবিক নির্যাতন চালায়। ৬ বছরের ছোট শিশুকে পর্যন্ত গণধর্ষণ করে। দেশের এমন কোন স্থান ছিল না যেখানে নির্যাতন হয়নি। যে কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা ভোট পায়নি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আন্দোলন ও নির্বাচন বানচালের নামে তারা নির্বিচারে নারীসহ দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে নাশকতা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী মানে একজন মা। কিন্তু একজন নারী হয়ে এতিমের টাকা মেরে খাওয়া এটা চিন্তাই করা যায় না। এটা সমস্ত নারী জাতির জন্য কলঙ্ক। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমাদের মেয়েরাই লাভবান হবে। দেশে যখন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ থাকে তখন সর্বস্তরের মানুষ কর্মক্ষেত্রে পারদর্শীতা দেখাতে পারে, দেশে উন্নতি হয়। আমরা ১৯৯৬ সালে যে সমস্ত প্রকল্প গ্রহণ করেছিলাম, বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। দেশে যদি সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ অব্যাহত থাকে তাহলে অনেক কাজ করা যায়। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে নারী-পুরুষ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সুসংহতকরণ আমাদের সরকারের গৃহীত বহুমুখী কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আমাকে ইউএন উইমেন প্লানেট ৫০: ৫০ চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।
কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা দরকার। আমরা তা নির্মাণ করবো। যার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভৌগলিক দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এশিয়ান হাইওয়ে, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে যোগাযোগ তৈরি করবো। যাতে বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারবে। এছাড়া আমরা আরও উন্নত বিমানবন্দর, দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করবো। আর গ্রামকে নগরে পরিণত করবো, নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেব সব গ্রামে।
সূত্র: ইত্তেফাক