রাজধানীর খুচরা বাজারে লাগামহীনভাবে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। গত দু’সপ্তাহে কয়েক দফা বৃদ্ধির পর এক দিনের ব্যবধানে গতকাল পেঁয়াজ কিনতে কেজিতে আরও ১০ টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তবে একই সময়ে দেশের স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমেছে। গত তিন দিনে বন্দরে পাইকারিতে কেজিপ্রতি কমেছে ১০ টাকা। গতকাল খুচরায় প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত শনিবারও ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ এখন ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই পেঁয়াজ ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। টিসিবির বাজার দরের তথ্য অনুযায়ী এক দিনে পেঁয়াজের দাম কেজিতে গড়ে ১০ টাকা বেড়েছে।
জানা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আগামী ২ অক্টোবর থেকে ১০ দিন বন্ধ থাকবে দেশের স্থলবন্দরগুলো। এ কারণে গত তিন দিন পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়েছেন আমদানিকারকরা। একসঙ্গে বাড়তি পেঁয়াজ সরবরাহ হওয়ায় স্থলবন্দরগুলোতে দাম কমে গেছে। গতকাল কেজিতে ৫ টাকা কমে হিলি ও ভোমরাসহ সব বন্দরের আড়তে পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। এই পেঁয়াজ শনিবারও প্রতি কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা ছিল। গত শুক্র ও শনিবার দুই দিনে কেজিতে ৫ টাকা করে কমেছে। গত বৃহস্পতিবার ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ হিসাবে গত তিন দিনে স্থলবন্দরগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা।
হিলি বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন সমকালকে বলেন, পেঁয়াজের দাম কমছে। পূজার আগে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা কমবে। তিনি বলেন, পূজার ছুটিতে অন্যান্য বছরের মতো এবারও বন্দর বন্ধ থাকবে। এ কারণে সবাই পেঁয়াজ আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাড়তি পেঁয়াজের চাপে দাম কমতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে হিলি বন্দরে প্রতিদিন ১৩ থেকে ১৪ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এখন প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ট্রাক আসছে।
ভারত পেঁয়াজের নূ্যনতম রফতানি মূল্য ৮৫০ ডলার নির্ধারণ করার পর পেঁয়াজ আমদানি কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়ছে। ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আনছেন আমদানিকারকরা। এজন্য বন্দরের পাইকারি আড়তগুলোতে দাম কমছে। ভারত থেকেও আমদানি বাড়ছে। হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, রফতানি মূল্য বাড়ার পর গত সপ্তাহের ছয় কার্যদিবসে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৮৮টি ট্রাকে ১ হাজার ৯০৫ টন পেঁয়াজ এসেছে। এর পর গত শনিবার এক দিনে ২২টি ট্রাকে আমদানি হয়েছে ৪৮৯ টন। গতকাল রোববার আরও বেশি পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান জাহাঙ্গীর সমকালকে বলেন, পেঁয়াজের চড়া দাম স্থায়ী হবে না। আগের চেয়ে আমদানি বেড়েছে। এতে আড়তগুলোতে দর কমতে শুরু করেছে। তাছাড়া মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ রাজধানীর বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে ব্যবসায়ীদের আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী সপ্তাহে আসবে। পাশাপাশি টিসিবি পেঁয়াজ বিক্রি বাড়াচ্ছে। এতে দাম আরও কমে আসবে।
এদিকে ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসায় পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি আড়তে দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে। গতকাল এ বাজারে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকায়। তবে কারওয়ান বাজারের আড়তে পেঁয়াজের দাম কমেনি। গতকাল এই বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৪ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়।
রাজধানীর খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও লাগামহীন। দেশি পেঁয়াজ ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম সমানতালে বাড়ছে। মিরপুর ১ নং, পীরেরবাগ ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের দিনের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারিতে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দাম নিচ্ছেন। পাইকারিতে কমলে ক্রেতারা কম দামে পাবেন। যদিও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। তা সত্ত্বেও পেঁয়াজের দামে ঝাঁজ সইতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন বাণিজ্য সচিব। তবে বাজারে দাম কমেনি, উল্টো বাড়ছে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির জানান, খুচরায় দাম বাড়তে থাকায় পেঁয়াজ বিক্রি কিছুটা বাড়িয়েছে টিসিবি। শুরুতে ৫টি ট্রাকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হলেও এখন ১০টি ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে। এ সপ্তাহের মধ্যে দেশের জেলা শহরেও বিক্রি শুরু হবে। প্রত্যেক ট্রাকে ৪৫ টাকা কেজি দরে প্রতিদিন এক হাজার কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। একজন ক্রেতা দুই কেজি পেঁয়াজ কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।