সম্প্রতি শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা হতে বিস্ফোরক তৈরীর কাঁচামাল উদ্ধার ও একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামী আবুল কাশেম ওরফে আবু মোসাবকে নিয়ে একটি বিস্তারিত বিবৃতি ফেসবুকে পোষ্ট করা হয়েছে। সদর সার্কেল শেরপুর নামের ফেসবুক আইডিতে আজ রাত সাড়ে ১১ টায় এই পোষ্ট করা হয়। এই পোষ্টে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিভাবে গ্রামের এক সহজ সরল ছেলে জঙ্গী হয়ে উঠেছে এ ব্যপারে বিস্তারিত লিখা হয়েছে।
শেরপুর টাইমস ডট কমের পাঠকদের জন্য পোষ্টটি হুবুহু তুলে ধরা হলো –
আবুল কাশেম ও ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ
আমি আজকে আপনাদের সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিভাবে গ্রামের এক সহজ সরল ছেলে জংঙ্গী হয়ে উঠল সে ব্যাপারে আলোচনা করব।
আপনারা জানেন যে গত ২২ শে অক্টোবর,১৭ তারিখে নকলার চদ্রকোনা বাজারে রাখা বিস্ফোরক দ্রব্য মামলার আসামী আবুল কাশেম ওরফে আবু মোসাব কে টাঙ্গাইল জেলার এলেঙ্গা থেকে নকলা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে এবং গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ কালে সে জানায় যে, ২০১৫ সাল হতে সে ফেসবুক ব্যবহার করতো এবং ফেসবুকে তার প্রায় ১ হাজার অপরিচিত বন্ধু ছিলো। উক্ত বন্ধুদের মধ্য হতে জনৈক “কোটিপতির জামাই” নামের এক আইডিতে সে বেশী বেশী লাইক ও কমেন্ট করত।ফেসবুক আইডিটি তে ইসলামিক পোস্ট থাকত এবং তাতে জিহাদ, সমাজের অন্যায়, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা থাকত ।আবুল কাশেম ইসলামিক মনের হওয়ায় উক্ত আইডির ফ্রেন্ড ছিল।কিছুদিন পর ঐ আইডি থেকে তাকে সালাম জানিয়ে একটি মেসেজ পাঠায় এবং সে তাতে উত্তর দেয়। এভাবে সে ঐ আইডিটির প্রতি বেশী আগ্রহী হয়ে উঠে ও সাথে তার বেশীরভাগ সময় চ্যাটিং চলতে থাকে ও ঘনিষ্ঠতা বেড়ে উঠে। এক পর্যায়ে উক্ত আইডি থেকে তাকে ফেসবুকে “আব্দুল ওয়াহেদ” নামে আইডি নামধারী অপর ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়।
উক্ত আব্দুল ওয়াহেদ নামের আইডি থেকে তাকে জানায় যে, তারা সমাজের যে সকল মানুষ অন্যায় করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবে এবং রাষ্ট্রের অনাচার, অন্যায় এর প্রতিবাদসহ নির্যাতিতদের পাশে দাড়াবে। এই সমস্ত কথাবার্তা চলার পর উক্ত আইডি থেকে তাকে তাদের কার্যক্রমের সাথে থাকার জন্য আহ্বান জানানো হলে সে তাতে রাজী হয়। যোগাযোগের একপর্যায়ে ২০১৬ সালের শেষ দিকে উক্ত আব্দুল ওয়াহেদ নামের ফেসবুক আইডি হতে তাকে Threema এ্যাপস-এ একটি আইডি খুলতে বলে।
সে উক্ত এপস এ আবু মুছাব নামে একটি আইডি খুলে। উক্ত এপসে তার সাথে ফেসবুকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা ব্যক্তির নিজের দুইটা আইডি ছিলো; যার একটির নাম Black আরেকটি আইডির নাম Stom। উক্ত আইডিগুলোর একটি Stom থেকে একদিন তাকে জানানো হয় যে, সে তার নিকট চারটি কন্টেইনার রাখতে চায়। কিন্তু আসামী আবুল কাশেম জানায় যে, কন্টেইনার রাখার মতো জায়গা নাই। এ কথা শুনে উক্ত Stom তাকে ঘর ভাড়া নেয়ার জন্য বলে এবং উক্ত ঘরের ভাড়া সে নিজে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। ঘর ভাড়া নেয়ার আগে উক্ত Stom তার নিকট অর্থাৎ চন্দ্রকোণায় সশরীরে দুই জন ব্যক্তিকে পাঠায়। Threema এ্যাপস-এ তাদের একজনের নাম ছিলো মামুন অপর জনের নাম ছিলো মোহাম্মদ। তারা ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চন্দ্রকোণা আসে এবং আসামী আবুল কাশেম এর সাথে ঘরভাড়ার বিষয়ে আধাঘন্টা আলোচনা করে চলে যায়।
অতঃপর আসামী আবুল কাশেম চন্দ্রকোণা বাজারের দর্জি ফয়জুদ্দিনের মাধ্যমে স্থানীয় মিনারা বেগমের ঘরটি মাসিক ৬০০/- টাকা চুক্তিতে ভাড়া নেয়। এরপর ২০১৭ সালের মার্চ মাসের দিকে উক্ত Stom আইডিধারী ব্যক্তি ১টি সাদা রংয়ের পিক-আপ এ করে ১৯ টি কন্টেইনার নিয়ে রাত অনুমান ১০.০০ ঘটিকার দিকে চন্দ্রকোণা বাজারে নিয়ে আসে। এ সময় আসামী আবুল কাশেম উক্ত কন্টেইনারগুলো ভাড়া করা ঘরে রাখে এবং Stom আইডিধারী ব্যক্তি তাকে জানায় যে, দুই মাসের মধ্যে সে উক্ত কন্টেইনারগুলো নিয়ে যাবে। আসামী আবুল কাশেম Stom আইডিধারী ব্যক্তির আসল নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে সে তার প্রকৃত নাম ঠিকানা জানাতে অস্বীকৃতি জানায় এবং আসামী আবুল কাশেমকে অগ্রীম ঘর ভাড়া ও হাতখরচ বাবদ নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যায়। আবুল কাশেম তাদের জিহাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে এসব জানতে হলে তাকে বাড়ী ছেড়ে একেবারে তাদের সাথে চলে আসতে হবে। এর মধ্যে Threema এ্যাপস-এ মামুন নামের আইডিধারী ব্যক্তি আসামী আবুল কাশেম কে তাদের সাথে কাজ করার জন্য আসামী আবুল কাশেমকে তাদের নিকট চলে যেতে বলে এবং সে জানায় যে তারা জেএমবি সংগঠনের সদস্য। এরপর আসামী আবুল কাশেম তাদের রেখে যাওয়া কন্টেইনারগুলো দ্রুত ফেরত নিতে বলে। এরপর মামুন তাকে জানায় যে Stom মারা গেছে তাই কন্টেইনার ফেরত নিতে দেরী হবে। আসামী আবুল কাশেম কন্টেইনার ফেরত না নিলে সেগুলো ফেলে দিবে মর্মে জানালে জেএমবির সদস্য মামুন আসামী আবুল কাশেমকে চন্দ্রকোণা এসে খুন করার হুমকী প্রদর্শন করে। এরপর মামুন দুই বারে এসে ১টি কন্টেইনার হতে তরল জাতীয় পদার্থ ছোট কন্টেইনারে ঢেলে নিয়ে যায়। এরপর একদিন Threema এ্যাপস-এ মোহাম্মদ নামের আইডি থেকে তাকে জানানো হয় যে, মামুন গ্রেফতার হয়েছে; সে নিজে যেন সাবধানে থাকে। তারা আবুল কাসেমের সাথে বিভিন্ন সময় চন্দ্রকোনা এসে আড্ডা দিত ও জিহাদের বিষয়ে কথা বলত।তারা তাকে সদস্য বাড়ানোর জন্য বলত।
এর কয়েকদিন পর পুলিশ চন্দ্রকোণা বাজারে আসামী আবুল কাশেমের ভাড়া নেয়া ঘরের তালা ভেঙ্গে উক্ত কন্টেইনারগুলো জব্দ করে নিয়ে যায়। উক্ত সংবাদ পেয়ে আসামী আবুল কাশেম ঢাকায় পালিয়ে যায় এবং সেখান থেকে চাপাইনবাবগঞ্জে তার এক বন্ধুর কাছে যায়। সেখানে সে তার বন্ধুকে খুজে না পেয়ে ঢাকা ফেরত আসার সময় ২২শে অক্টোবর দুপুরের দিকে পুলিশ আসামী আবুল কাশেমকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড হতে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে আসামী আবুল কাশেম বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
আমার মতে আবুল কাশেম শুধূ আগ্রহের বশে ও ইসলামিক মনের হওয়ায় তার সরলতার সুযোগ নিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠী তাকে কাজে লাগাল ও জঙ্গীরুপে তৈরি করল। কাশেমের মত অনেকে ইন্টারনেট বা ফেসবুক সহ বিভিন্ন এপস ব্যবহার করে থাকেন তাদের এখন আরো সচেতন হতে হবে। শুধু জঙ্গী গোস্থীই নয় ইন্টারনেটে রয়েছে অনেক প্রতারনার ফাদ।কখন কোথায় কি ধরনের লিংকে ক্লিক করতে হবে সে ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং ফেসবুকে লাইক,কমেন্ট,শেয়ার ও পোস্ট বুজে শুনে করতে হবে । তা না হলে পরিণতি হবে আবুল কাশেমের মত যে কিনা একটি ফার্মেসী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চাইছিল তার ভবিষ্যৎ বিনির্মানের ও তার পরিবারের হাল ধরার।