পরিবারের ভয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারছেন না বলে দাবী করেছেন মোঃ রুদ্র মিয়া (১৭) নামের এক এতিম পরীক্ষার্থী। শুধু তাই নয়, তার নামে রেখে যাওয়া দাদার সম্পত্তিও পরিবারের লোকজন জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শেরপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তার আপন দাদী, ফুপু ও চাচা-চাচীর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন ওই পরীক্ষার্থী। রুদ্র শহরের নবীনগর এলাকার মৃত নবীকুল ইসলামের একমাত্র সন্তান। এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রুদ্র জানান, তারা বাবা নবীকুল ইসলাম ২০০৬ সালে এলাকাভিত্তিক এক সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর ২০০৬ সালে তার দাদা মৃত আব্দুল গণি মিয়া রুদ্রর নামে শেরপুর জেলার বয়রা পরানপুর মৌজার বিআরএস খতিয়ান নং ১৩৫৬, বিআরএস দাগ নং ১৩৫ এর মোট ২৫ শতাংশ জমির মধ্যে সোয়া ছয় শতাংশ এবং অন্যান্য দাগেসহ মোট সাড়ে ১৯ শতাংশ জমি দলিলমূলে লিখে দেন। কিন্তু সকল দলিল তার দাদী জয়গুণ বিবি, ফুপু শিল্পী বেগম, চাচা মিলন ও চাচী স্বপ্না বেগম অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেদের কবজায় রেখে দিয়েছেন। এছাড়া বাবার মৃত্যুর পর মৃত্যুজনিত মামলায় আপোস-মিমাংসা বাবদ প্রাপ্ত ১৫ লক্ষ টাকাও আত্মসাত করেছেন তারা। একইসাথে তারা জমি জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রুদ্র আরও জানান, এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও পারিবারিক অশান্তি ও তাদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বর্তমানে এখন নানীর বাড়ি আশ্রয় নেওয়ায় এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। তাকে পাগল বানিয়ে বেড়ি পড়ানোর হুমকিও দিয়ে আসছেন ওই পরিবারটি, এজন্য নিজেকে রক্ষায় নানীর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ও তার নানীর পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বিধায় এ ব্যাপারে দ্রুতই সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করবেন বলেও জানান তিনি।
রুদ্রর নানী মাহফুজা বেগম বলেন, আমার নাতীকে নিয়ে ১৩দিন যাবৎ তাদের ভয় ও হুমকির কারণে অন্যত্র পালিয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমি এ বিষয়ে সঠিক বিচার চাই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রুদ্রর দাদী জয়গুণ বিবি, ফুপু শিল্পী বেগম ও চাচা মিলন মিয়া জানান, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, তার (রুদ্র) জমি সব এখানেই আছে। রুদ্রর জমি আমরা কেউ বিক্রি করতে চাইনি বা বিক্রি করার জন্য কিছু বলাও হয়নি। রুদ্র ১৫দিন আগে নানীর বাড়ি চলে গিয়ে তাদের প্ররোচনায় এসব কথা ও কাজ করছে বলে জানান তারা। রুদ্রর থাকার জন্য দাদী জয়গুণ বেগম ঘরও ছেড়ে দিতে চেয়েছেন, কিন্তু সে মা ও নানীর প্ররোচনায় এখানে এখন থাকতে চায় না। বাবার মৃত্যুর পর মৃত্যুজনিত মামলায় আপোস-মিমাংসা বাবদ ১৫ লক্ষ টাকার বিষয়ে তারা জানান, রুদ্রের মা অন্যত্র বিয়ে করেছে, আমরাই তাকে লালন-পালন করেছি। এতে তো অনেক খরচ হয়েছে। তখনতো কেউ খোঁজ নেয়নি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রেজুয়ান বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না, আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। আমরা সেই শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দিবো আইনগত প্রক্রিয়ায় যেতে। তবে, সে যদি আমাদের কাছে আসে তাহলে আমরা তাকে সহযোগিতা করবো।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বছির আহম্মেদ বাদল বলেন, এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।