বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বেগবান করতে আগামী চার সাপ্তাহের মধ্যেই বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
শনিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে স্থায়ী কমিটির সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্যে কর্মসূচি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচি হচ্ছে, আগামী চার সাপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এই কর্মসূচিগুলোতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকা মহানগরীতে এই চার সাপ্তাহের মধ্যে দল, অঙ্গদল ও সহযোগী সংগঠনসমূহের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
কর্মসূচির ধরন কি হবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা বিভাগগুলোতে গণতান্ত্রিক যেসব কর্মসূচি আছে যেমন বিক্ষোভ সমাবেশ, সমাবেশ ইত্যাদি হবে।
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন যে, খালেদা জিয়াকে জামিন পেতে তার আইনি প্রক্রিয়ায় সরকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে রুপপুরে পারমানবিক প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সম্পর্কে একটা বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, যে ওই প্রকৌশলী ছাত্র দলের বুয়েটের ভিপি ছিলেন। এটা মিথ্যা, একেবারে একটা অসত্য কথা তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন একরম অসত্য বক্তব্য দেন সেটা অপ্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে প্রকৌশলী মাসুদুল হক বুয়েটের ছাত্র নন। তিনি খুলনার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটের ছাত্র। আমরা তার সব ডাটা সংগ্রহ করেছি। সে কুয়েটের একেএম ফজলুল হক হলের ২৬ নং রুমে থাকতো। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তার রোল নম্বর ৯২১৩৫। সে কোনো দিনই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সম্ভবত সে বাম কোনো ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলো। সে এখন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলীর সাথে জড়িত। এরকম একটি অসত্য তথ্য সংসদকে দেয়া-এটা সংসদের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি এরকম বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য কখনো গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এটা অনভিপ্রেত।’
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার নিন্দাও জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি। সোহেল তাজের ভাগনে উদ্ধার হলেও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, পারভেজ আলম হীরু, চৌধুরী আলমসহ দীর্ঘ বছর ধরে গুম হওয়ার নেতা-কর্মীদের কোনো তথ্য সরকার না দিতে পারায় বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মহাসচিব।
এ সময় ছাত্র দলের বিক্ষুব্ধদের কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহবান জানান মির্জা ফখরুল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্র দলের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অল স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলেছেন। অর্থাৎ ছাত্র দলের রাজনীতির সাথে যারা অতীতে জড়িত ছিলেন, নেতা ছিলেন, বর্তমানে যারা নেতা আছেন এবং যারা এখন বিক্ষোভ করছে, আন্দোলন করছে সকলের সঙ্গে উনি কথা বলেছেন। কথা বলার পরেই দল থেকে একটা সিদ্ধান্ত তাদেরকে দেয়া হয়েছে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, আমরা মনে করি যে, এটা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন নয়।
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
এই বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নবনির্বাচিত সদস্য সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন।