‘আমরা শেখের বেডি শেখ হাসিনারে ধন্যবাদ দেই। আগে আমরা বিনা আহারে দিন কাডাইতাম। অহন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাইয়া নাতি-পুতি লইয়া ভালাই চলতাছি। আমগোর এমপি মতিয়ার চেষ্টায় সরকার আমগোরে থাহার লাই¹া ঘর বানাইয়া দিতাছে। অহন আমরা সুখেই আছি। তবে আমগরে আবাদি জমি নাই। অহন বয়স অইছে কবে যে মইরা যাই। শেখের বেডির কাছে আমগো আর বেশি দাবি-দাওয়াও নাই। এহন জীবনের শেষ ইচ্ছা আমরা যেন শেখের বেডির সাক্ষাত চাই।’- এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন সরকারের কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া শেরপুরের সেই সোহাগপুর বিধবা পল্লীর বীরাঙ্গনা শহীদ ইব্রাহিম মিয়ার স্ত্রী হাফিজা বেগম (৭০)। ঐতিহাসিক সোহাগপুর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সরেজমিনে ওই এলাকায় গেলে স্বামী-সম্ভ্রম হারানোসহ পাওয়া-না পাওয়ার কথোপকথনের এক পর্যায়ে ওই অনুভূতি ব্যক্ত করেন বীরাঙ্গনা হাফিজা বেগম।
শুধু হাফিজা বেগমই নন, স্বামী-সম্ভ্রম হারানোর বিচারসহ এখন দিন-মানের পরিবর্তন হওয়ায় এখনো বেঁচে থাকা ২৪জন বিরাঙ্গনাই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই সাক্ষাতের প্রত্যাশা করছেন।
বীরাঙ্গনা বিধবাদের ওই প্রত্যাশার সাথে একমত পোষণ করে স্থানীয় শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, সোহাগপুর গণহত্যার ঘটনায় এখনও জীবিত আছেন ২৪ জন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও ইতিহাসের এমন নারকীয় হত্যাযজ্ঞের স্থানটিতে স্মৃতি রক্ষার্থে নেয়া হয়নি কোন উদ্যোগ। সরকারীভাবে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ। দ্রুত সময়ের মধ্যে শহীদদের স্বরণে স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের দাবী শহীদ পরিবারের সন্তানদের।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী সোহাগপুর গ্রামে ঘটে এক ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি। কৃষকের ছদ্মবেশে এই গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা লুকিয়ে আছে, এমন খবরে ১৯৭১ সালের এই দিনে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জামাত নেতা কামরুজ্জামানের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় পাক সেনারা সীমান্তবর্তী সোহাগপুর গ্রামে চালায় গণহত্যা, ধর্ষন, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ। ৬ ঘন্টা তান্ডব চালিয়ে গুলি করে ও বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে নিরহ ১৮৭ জন পুরুষকে হত্যা করে। এতে স্বামী হারিয়ে ৬৩ জন নারী হন বিধবা। এরপর থেকেই এই গ্রামের নাম হয় বিধবা পল্লী।