আজ ১০ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এই দিনে দুপুর ১টা ৪১ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার এ দিবসটি বাঙালি জাতির মাঝে অনেক বেশি দ্যুতিময় হয়ে ধরা দিচ্ছে। কারণ একাত্তরের অমোচনীয় ইতিহাস যার হাত ধরে সৃষ্টি, যার বদৌলতে এ জাতি পেয়েছে সবুজ জমিনে লাল সূর্যের একটি পতাকা, সেই মহান রাজনীতিক বঙ্গবন্ধুর আসন্ন জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনাও শুরু হচ্ছে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস অর্থাৎ আজ থেকে। আগামী ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে দেশজুড়ে। সরকার ঘোষিত মুজিববর্ষেরও উদযাপন শুরু হবে এদিন থেকে।
ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দীর্ঘ ৯ মাস ১৪ দিন পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগারে বন্দি জীবন শেষে ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির পিতা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই বিজয়ের পূর্ণতা লাভ করে।’
পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারবিরোধী সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এ ঐতিহাসিক দিবসে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এ ছাড়া দুপুর ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ক্ষণগণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বতৃন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে নয় মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে। জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোর রাতে ইংরেজি হিসাবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে পরের দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন। ১০ জানুয়ারি সকালেই তিনি নামেন দিল্লিতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং দেশটির সাধারণ মানুষের আন্তরিক উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের নেতৃবৃন্দ ও জনগণের অকৃপণ সাহায্যের জন্য তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। নিজভূমে প্রত্যাবর্তনকে তিনি আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে।
বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন ১০ জানুয়ারি। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর থেকেই নব্য স্বাধীন জাতি আকুল অপেক্ষায় ছিল স্বদেশে ফিরে আসা বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য। আনন্দে উদ্বেল লাখো মানুষ সেদিন ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত সমবেত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।