দেশে ক্রমাগত সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলেছে। প্রতিনিয়ত কত রকমের ঘটনা ঘটছে। সমাজের ইতিবাচক শক্তি হিসেবে আমরা সামাজিক বন্ধনের কথা বলে থাকি। কিন্তু সেভাবে আমরা মানবিক মানুষ হতে পারছি না। বর্তমান সময়ে চারপাশে যেসব ঘটনা ঘটছে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। মানুষ দিন দিন হিংস্র, নিষ্ঠুর বর্বর হয়ে উঠছে। গত সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়- চলতি বছরের মে মাসে ১১০ কন্যাশিশু এবং ১৩৩ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪০ কন্যাশিশুসহ ৬২ জন। এর মধ্যে ১২ কন্যাশিশুসহ ২০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, দুজন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে, একজন ধর্ষণের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। তিনজন কন্যাশিশুসহ সাতজনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ছাড়া মে মাসে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন ২২ কন্যাশিশুসহ ২৩ জন। যা সত্যি ভয়ঙ্কর। এসব ঘটনা কোনো সভ্য সমাজের চিত্র হতে পারে না। এ ধরনের ঘটনাগুলো জাতির জন্য একটি অশনিসংকেত বহন করে। ইঙ্গিত দেয় মানুষের হিংস্রতার উত্থানের। সামাজিক অপরাধের বেশি শিকার নারী।
বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিশ্বাসযোগ্য না হলেও অবলীলায় সংঘটিত হচ্ছে এমন সব ঘটনা। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটলেই তা নিয়ে আলোচনা হয়। নিয়ম মেনে থানায় মামলা হয়। বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা নারী ও কন্যারা ভার্চুয়ালি যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। দুঃখজনক হচ্ছে বিচার নেই! একের পর এক ঘটনা ঘটলেও উল্লেখযোগ্যভাবে শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। সমাজ থেকে ঘৃণ্যরূপী এ মানুষকে যথাযথ শাস্তির আওতায় না আনা গেলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে দেশ। এ পরিস্থিতি পুরো জাতির জন্যই দুর্ভাগ্যের। তাই এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। নির্যাতন বন্ধ করতে মানুষের সচেতনতা যেমন জরুরি, তেমনি সরকারের সদিচ্ছা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগও অপরিহার্য। এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই, প্রশাসন সব অপরাধের ব্যাপারে তৎপর হোক। অপরাধ করে পার পাওয়া যায়- এমন ধারণা যেন সমাজে না জন্মে।