শেরপুর জেলার নকলা উপজেলায় আউশ মৌসুমে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই সবুজ আর সবুজ। উপজেলার বিভিন্ন মাঠে দেখা যায় আউশ ধানের মাঠ। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।
লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্জন বেশি এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আউশ ধানের আবাদ হওয়ার পিছনে উপজেলা কৃষি অফিসের অকান্ত পরিশ্রম আর অবদান উল্লেখযোগ্য। গত বছরের বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে যে ক্ষতি হয়েছিল তা এ বছর কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর।
নকলা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ হেক্টর আর অর্জন হয়েছে ৭৫ হেক্টর বেড়ে ২৯৫ হেক্টরে। যা গত বছর অর্জন ছিল ১৬০ হেক্টর জমি। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে উৎপাদন অনেক বাড়বে বলে ধারনা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
চলতি মৌসুমে ব্রিধান-৪৮, বিনাধান-১৯, বিআর-২৬, নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধান আবাদ হলেও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাত ব্রিধান-৮২ এ উপজেলায় ড্রাম সিডারের মাধ্যমে১৫ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫৪০ কৃষককে এক বিঘা করে ৫৪০ বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপনের জন্য প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া উপজেলায় ৭২ টি প্রদর্শনী প্লটেও আউশ আবদ করা হয়েছে। তারমধ্যে চাষী পর্যায়ে বীজ উৎপাদনের জন্য এক একর করে ১৫টি, ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি-২) প্রকল্পের আওতায় ৫০ শতাংশ করে ১৬টি, পুষ্টি প্রকল্পের আওতায় এক বিঘা করে ৩টি, রাজস্ব খাতের আওতায় ৫০ শতাংশ করে ২০টি, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা)’র উদ্ভাবিত বিনাধান-১৯ এক বিঘা করে ১৫টি এবং ড্রাম সিডারের মাধ্যমে জালালপুর, ধুকুড়িয়া ও টালকী এলাকায় তিনটি প্রদর্শনী প্লটে আরও ১৫ একর জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়েছে।
উপজেলার টালকী এলাকার কৃষক গাজী মিয়া জানান, কম খরচে, অল্প পরিচর্যায় ভালো ফলনের জন্য আউশ আবাদে আগের চেয়ে আমাদের আগ্রহ বেশী। কৃষি অফিসের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে আমরা আউশ ধান আবাদ করেছি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গত বোরো আবাদে বন্যায় নকলার কৃষকদের খুব বেশি ক্ষতি নাহলেও, অতিবৃষ্টি ও শীলা বৃষ্টিতে বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা। তাই কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পতিত জমিতেও আউশ ধান রোপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়ে গিয়ে, গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আবাদ হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, আউশ ধান রোপন উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে এবং কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আউশ আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে কৃষকদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনা দেওয়া হচ্ছে।