১৫ বছর সময় ধরে সোয়া দুই’শ বছরের পুরনো মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীন নিদর্শন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাঘড়া ‘লস্কর খানবাড়ী’ জামে মসজিদটির সংস্কার হয়নি। মসজিদটির তত্ত্বাবধানে আছে জাতীয় যাদুঘর ও প্রত্নতত্ত্ব¡ বিভাগ। অনুমতি না থাকায় এলাকাবাসীও মসজিদটি সংস্কার করতে পারছে না। ফলে সঠিক পরিচর্যার অভাবে ভঙ্গুর দশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে মসজিদটি।
এমন অবস্থায়ও মসজিদটি দেখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন। এলাকাবাসী ও দর্শনার্থীরা মসজিদটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘লস্কর খানবাড়ী’র মসজিদটি ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতিবান্দা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদের নাম ঘাগড়া লস্কর খান মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। উপজেলা সদর থেকে এর দূরত প্রায় ৮ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারনা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটির দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজী ১৮০৮ সাল। এর গঠন পদ্ধতি ও স্থাপত্য কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। এক গম্বুজবিশিষ্ট বর্গাকৃতির (২৭ ফুট বাই ২৭ ফুট) এই মসজিদের ভেতর রয়েছে দুটো সুদৃঢ় খিলান। মাঝখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় বারটি মিনার। এর মধ্যে চারকোণায় রয়েছে চারটি। মসজিদে দরজা রয়েছে মাত্র একটি। ভেতরে মেহরাব ও দেয়াল অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারু কাজের ফুলদানী ও ফুল। মসজিদের দেয়ালের গাঁথুনী ৪ ফুট পাশ, যা চুন ও সুরকি দিয়ে গাথা। তৎকালীন খান বাড়ীর লোকজনসহ গ্রামের অনেকে ৫৮ শতক জায়গার উপর মসজিদটি ওয়াকফ করে দেয়। এর মধ্যে মসজিদটির মূলভবন ও চেহান রয়েছে ১৭ শতকের উপর এবং ৪১ শতকের উপর জমিতে রয়েছে কবরস্থান।
মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকৃতির দেখা গেলেও ভিতরে খুব বেশী বড় নয়। উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসজিদের ভিতর ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ চেহানে আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।
গত প্রায় ১৯ বছর আগে জাতীয় যাদুঘর এর প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ, একটি সতর্কবাণী লাগানো ও দায় সারাভাবে একবার রং করা এবং মসজিদটির বাউন্ডারী দেয়াল ছাড়া আর কোন ভূমিকা পালন করেনি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নিয়োগপ্রাপ্ত খাদেম মো. সাইফুল ইসলাম গত দুই বছর আগে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেলে এখন পর্যন্ত কোন খাদেমের নিয়োগ দেয়নি সংশ্লিষ্ট কৃতপক্ষ। মসজিদটির মেঝে ডেবে যাচ্ছে, দেয়ালে ফাটল ধরছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এ নীরব সাক্ষী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশংকা প্রকাশ করছেন। তারা মসজিদটি সংরক্ষনের দাবি জানান।
মসজিদের বর্তমান ইমাম মুফতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৪ সালের পর থেকে মসজিদটিতে কোনো চুনকাম করা হয়নি। মসজিদের ভিতরে ও বাইরের বিভিন্ন অংশে শেওলা ধরে কালো হয়ে গেছে। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ফাটল ও আস্তর খসে পড়ছে। মসজিদের চেহানের বিভিন্ন অংশে ফাটলের দেখা দিয়েছে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আফজাল খান বলেন, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে মসজিদটির সংস্কারের ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু এই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর পরে আর কারও দেখা মিলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করবেন বলে জানান তিনি।