মুসলিম রীতিতে দাফনের পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে পাঁচদিন পর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শেরপুরের শান্ত চক্রবর্তী নামে সনাতন ধর্মাবলম্বী সেই ব্যক্তির লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেই ব্যক্তির লাশ জামালপুর পৌর করবস্থান থেকে তুলে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিকেলেই শেরপুর কেন্দ্রীয় শ্মশানে তাকে দাহ করাসহ শেষকৃত্যাদি সম্পন্ন হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন।
গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজের পরদিন মঙ্গলবার সকালে জামালপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান শান্ত চক্রবর্তী। রেলওয়ে পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয়ের মুসলিম ব্যক্তি হিসেবে মুসলিম রীতিতে পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করেছিল। শান্ত চক্রবর্তী শেরপুর জেলার শেরপুর পৌরসভার গৃর্দানারায়ণপুর এলাকার মৃত সমর চক্রবর্তীর ছেলে।
শান্ত চক্রবর্তীর পরিবার সূত্র জানায়, শান্ত চক্রবর্তী জামালপুর শহরের রেলগেট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার হিসেবে কিছুদিন চাকরি করেছেন। করোনার কারণে মাস ছয়েক আগে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে শেরপুরে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করতেন। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে ওই রাতে আর বাড়ি ফিরে যাননি। পরদিন মঙ্গলবার ভোরে জামালপুর রেলস্টেশন থেকে পূর্বদিকে রেললাইনের পাশে গুরুতর আহত অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ওই ব্যক্তিকে জামালপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় সেখানেই তিনি মারা যান।
পরে রেলওয়ে পুলিশ জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে তার লাশের ময়নাতদন্ত করে। এরপর আনজুমানে মফিদুল ইসলামের সহায়তায় মুসলিম রীতিতে মঙ্গলবার বিকেলে জামালপুর পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনাস্থলের একটি ভিডিও দেখে শান্ত চক্রবর্তীর স্ত্রী রূপা চক্রবর্তী ও তাদের একমাত্র ছেলে স্বরূপ চক্রবর্তী সোহম তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন। ভিডিওটি সংগ্রহ করে তারা জামালপুর রেলওয়ে থানায় যোগাযোগ করেন। কবর থেকে লাশ তুলে শনাক্ত করার বিষয়টি অবশেষে আইনি প্রক্রিয়ায় গড়ায়।
এদিকে, মৃত শান্ত চক্রবর্তীর ছেলে স্বরূপ চক্রবর্তী সোহম কবর থেকে তার বাবার লাশ তুলে শনাক্ত করা শেষে লাশ শেরপুরে নিয়ে সনাতন ধর্মীয় রীতিতে দাহ করার জন্য গত বুধবার জামালপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বাবু একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর থানা পুলিশের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ তুলে পরিবারের স্বজনদের শনাক্ত করার পর লাশ হস্তান্তরের আদেশ দেন। সেই আদেশের প্রেক্ষিতে শনিবার বেলা ১২টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আরিফুর রহমানের উপস্থিতিতে কবর থেকে লাশ তোলা হলে লাশটি শান্ত চক্রবর্তীর বলেই শনাক্ত করেন তার ছেলে স্বরূপ চক্রবর্তী সোহম। পরে তারা একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে শান্ত চক্রবর্তীর লাশ নিয়ে শেরপুরে নিয়ে যান।
শান্ত চক্রবর্তীর ছেলে স্বরূপ চক্রবর্তী সোহম জানান, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে শেরপুর শহরের কেন্দ্রীয় শ্মশানে তার বাবার লাশের দাহ করাসহ শেষকৃত্যাদি সম্পন্ন হয়েছে। নিখোঁজ বাবাকে মৃত অবস্থায় শনাক্ত করে বাড়িতে নিয়ে দাহ করতে পারলেও ট্রেনে কাটাপড়ে আহত হওয়ার পর মৃত্যুর ঘটনাটিকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন তার ছেলে সোহম ও পরিবারের অন্যান্য স্বজনরা।