শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল গ্রামে আকস্মিক নদী ধসে অন্তত ত্রিশ ফুট গভীরে ডেবে গেছে প্রায় ২শ ফুট ভোগাই নদীর তীর রক্ষাবাঁধ। ফলে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীদের মাঝে। এ জন্য অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী জানায়, সম্প্রতি কোন প্রকার স্রোত বা ঢল ছাড়াই হঠাৎ নয়াবিল বানিয়াপাড়ায় মানিক মিয়ার বাড়ির সামনে ভোগাই নদীর বাঁধে ধস নামতে শুরু করে। মুহূর্তেই প্রায় ১শ ফুট এলাকার বাঁধ ধসে অন্তত ত্রিশ ফুট নদীর গভীরে ঢুকে যায়। একইভাবে মুকুল মিয়ার বাড়ির সামনে প্রায় ৪০ ফুট বাঁধে ধস নামে ও গভীরে ডেবে যায়। এর আগে একই গ্রামের উত্তরাংশে জমিলার বাড়ি সংলগ্নস্থানে আরও প্রায় ৭০ ফুট বাঁধ ধসে নদীর গভীরে ডেবে যায়। এছাড়াও গত ১২ আগস্টের পাহাড়ীঢলে নদীর উল্টোপাড়ে ফুলপুর এলাকার ক্ষুদিরাম নামে এক নাপিতের (নরসুন্দর) বসতবাড়ি ভিটেমাটিসহ মুহূর্তেই নদীগর্ভে তলিয়ে যায়। ফলে ওই পরিবারটি এখন বাস্তুহারা। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোন মুহূর্তে পাহাড়ি ঢল নামলে ধসে যাওয়া ওইসব স্থান দিয়ে আকস্মিক বন্যা আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো চালিত ড্রেজার বসিয়ে নদীর চর ছাড়াও তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। এমনকি নদীর তীর ঘেঁষে সুরঙ্গ করে ও বড় বড় গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বাধা দিলেও উত্তোলনকারীরা তা মানেনি। ফলে নদী এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে নদী ভাঙ্গন, ঘটছে নদীতীরবর্তী এলাকা ধসের ঘটনা। এতে আবাদী জমিসহ ভিটেমাটি হারাতে বসেছেন আশপাশের মানুষ।
সদ্য ভূমিহীন ক্ষুদিরাম (৫০) জানায়, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন তার বাড়ির নিকট নদীর তীর ঘেঁষে বালু উত্তোলন করেছে। বারবার বাধা দেওয়ার পরও যখন সে মানছিল না, একপর্যায়ে ড্রেজারের পাইপ কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলি। এরপরও সে ক্ষমতার জোরে আমার বাড়ি সংলগ্ন তীরে সুরঙ্গ করে বালু উত্তোলন চালিয়ে যায়। এর ফলে গত ১২ আগস্টের বন্যায় দিনে-দুপুরে ভিটেমাটিসহ সবকিছু নদীগর্ভে তলিয়ে যায়।
নয়াবিল গ্রামের ইউপি সদস্য আজাহারুল ইসলাম জানান, গত অন্তত ১৫-২০ বছর ধরে এখানে কোন নদী ভাঙ্গন ছিল না। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এ বছর ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদিরামের ঘর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার সময় শেরপুরের ডিসি মহোদয় (জেলা প্রশাসক), নালিতাবাড়ীর এসিল্যান্ড মহোদয়সহ আমরা এখানেই উপস্থিত ছিলাম। সেদিন বন্যা ও পাহাড়ি ঢল পরিদর্শনে এসেছিলেন তারা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী দেওয়ান জানান, এমনিতেই গত ১২ আগস্টের বন্যায় এ ইউনিয়নের ভোগাই নদীর হাতিপাগার ও নয়াবিল গ্রামে দুইটি ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় এবং ঢলের পানিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ধসে যাওয়া এসব জায়গায় এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে চলতি মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরফদার সোহেল রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, আপাতত বাঁশের খুঁটি ও বালির বস্তা ফেলে প্রাথমিকভাবে পাহাড়ি ঢলের পানি ফেরাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হবে।
শেরপুর টাইমস/ বা.স