১৮ বছর বয়সী ছুরাইয়া। বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সুতির পাড় গ্রামে। আর এই ছুরাইয়ার গল্পটা একটু ভিন্ন।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থামাতে পারেনি ছুরাইয়াকে। অকজো দুটি হাত, তাতে কি। লেখা, মোবাইল ব্যবহার সবকিছু পা দিয়ে করে যাচ্ছেন ছুরাইয়া।
পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের কারণে ছোট থেকেই চেষ্টা করতে থাকেন দুই পা দিয়ে লেখার। আর এভাবেই আন্ধারিয়া সুতির পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
এরপর আন্ধারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সলে জেএসসিতে জিপিএ-৪ ও ২০১৮ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পান। এইচএসসি পাস করেছেন ২০২০ সালে শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্রি কলেজ থেকে। এতে পেয়েছেন জিপিএ-৪।
ভাঙা ভাঙা কন্ঠে ছুরাইয়া শেরপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমি ফার্স্ট ক্লাস অফিসার হতে চাই।’
আর স্বপ্ন এই পূরণে ছুরাইয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া।
প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম নেয়ায় প্রথমে ছুরাইয়াকে নিয়ে বাবা ছফির উদ্দিন ও মা মুর্শিদা ছফির দুঃশ্চিন্তা করলেও মেয়ের অদম্য চেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তি দেখে তাদের চিন্তাভাবনাতেও পরিবর্তন আসে। তারা মনে করেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে তাদের মেয়ে অনেক বড় হবে।
মায়ের আশা, প্রতিবন্ধী কোটায় হলেও যেন মেয়েটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়। তাহলে সেখান থেকে তার প্রতিভা বিকাশ করতে পারবে।
স্নাতক পড়ুয়া ছুরাইয়ার জেঠাতো বোন মরিয়ম আক্তার শেরপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে ছুরাইয়াকে নিয়ে নানামুখী চিন্তা করতাম, শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে কিভাবে কি করবে এ নিয়ে। শুধু শুধু বাবা-মার কষ্টই বাড়বে।
‘তবে এখন মনে করি ওর ইচ্ছাশক্তিই আশীর্বাদ হয়ে গেছে। আশা করি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসবে। মেয়েটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
রাজধানীর তিতুমীর কলেজে অধ্যয়নরত ছুরাইয়ার জেঠাতো ভাই মাসুদ মিয়া শেরপুর টাইমসকে বলেন, ‘আমরা ছুরাইয়াকে তার আগ্রহ অনুযায়ী যতটুকু ইচ্ছা ঠিক ততটুকু পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই। সুযোগ পেলে ছুরাইয়া প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে সমাজের মডেল হয়ে থাকবে।’
প্রতিবেশী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রতিবন্ধী মেয়েডারে দেইখা আমরা মনে করতাম এডারে দিয়ে কী করব? এহন দেহি ও অনেকখানি নেহাপড়া কইরা ফেলাইছে। ময়মনসিংহে গিয়েও পরিক্ষা দিয়ে আইলো।’
জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘আমরা জানতে পারলাম দুই পায়ে লিখে প্রতিবন্ধী ছুরাইয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা আশা করছি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে। কারণ কারো সাহায্য ছাড়া দুই পায়ে লিখেই সে এ পর্যন্ত এসেছে। আমরা ওই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে সব ধরনের সহযোগিতা করব।’