অভিষিক্ত শিবাম দুবের করা ওভারের তৃতীয় বলটি লংঅন আর মিডউইকেটের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে বাউন্ডারির ওপাড়ে আছড়ে ফেললেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এর মধ্য দিয়ে মাধ্যমে সম্পন্ন হলো অসাধারণ এক জয়, সম্ভব হলো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ভারতবধ। তাও আবার তাদেরই মাটিতে।
মাহমুদউল্লাহ যখন উইনিং শট নেন, তখন উইকেটের অপর প্রান্তে ছিলেন মুশফিকুর রহীম। যিনি আগের ওভারে টানা ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সহজ করেছিলেন সমীকরণ, শেষ ওভারে যা ছিলো মাত্র ৪ রানের চাহিদা। তবু মনে ছিলো অজানা এক ভয়।
প্রায় ৪৩ মাস পর আবার যখন একই পরিস্থিতিতে দল, তখনও উইকেটে ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। তবে এবার আর ভুল করেননি দুই ভায়রা ভাই। আগেরবার ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া মাহমুদউল্লাহ, এবার ঠিকই ছক্কা মেরেই নিশ্চিত করেন দলের জয়।
তবু এমন এক জয়ের পর মুশফিক বা বাংলাদেশ দলের উদযাপনে ছিলো না বিশেষ কিছু। আনন্দের আতিশয্যে ভেসে যাননি মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, আবার ড্রেসিংরুম থেকেও ছুটে আসেননি দলের অন্য খেলোয়াড়রা। নিজেদের মধ্যে অভিনন্দন আদান প্রদান এবং ভারতের খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দনের পর ড্রেসিংরুমের পথে পা বাড়ান দুই ব্যাটসম্যান মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ।
ম্যাচ শেষে স্বাভাবিকভাবেই এ প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় ম্যাচসেরা মুশফিকুর রহীমকে। জানতে চাওয়া হয়, অসাধারণ এ জয়ের পরেও উদযাপনে কেনো ছিলো না কোনো বিশেষত্ব। পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে মুশফিক জানিয়েছিলেন, মাত্র শেষ হয়েছে এক ম্যাচ। সিরিজ নিশ্চিত হওয়ার আগে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ নেই। তাই সবার আগে সিরিজ জয় নিশ্চিত করাই বাংলাদেশের লক্ষ্য।
কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, এ লক্ষ্যটি বেশ কঠিনই মনে হতে পারে টাইগারদের জন্য। কেননা কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলেছে ২৭টি। এর মধ্যে পরাজয় মিলেছে ১৬টিতে। টাইগারদের জয় ৫ সিরিজে, ড্র হয়েছে বাকি ৬টি।
এই ২৭ সিরিজের মধ্যে কমপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ছিলো ১৪টি। যেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র ২টি সিরিজে। প্রথমটি ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে, তাদেরই মাটিতে। আর পরেরটি গতবছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে, ক্যারিবীয়দের মাঠেই।
আর এক ম্যাচের সিরিজে জয় তিনটি যথাক্রমে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে, ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিনটিই ঘরের মাঠে।
ড্র হওয়া সিরিজগুলো হলো ২০১২ সালে নেদারল্যান্ডসের মাটিতে ১-১; ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের মাটিতে ১-১; একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২০১৫ সালে ১-১ ও ২০১৬ সালে ২-২ আর সবশেষটি ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১-১ ব্যবধানে ড্র। এর বাইরে ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এক ম্যাচের সিরিজের একমাত্র ম্যাচটি ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
প্রাপ্তি (সিরিজ জয়) আর অর্ধপ্রাপ্তির (সিরিজ ড্র) হিসেব আঙুলের কড়া গুনে করা গেলেও, অপ্রাপ্তি বা ব্যর্থতার যোগ-বিয়োগ করতে রীতিমতো বসতে হবে খাতা-কলম নিয়ে। কেননা বৃষ্টিতে বাতিল হওয়া সিরিজটি বাদ দিলে জয় ও ড্র যেখানে মাত্র ১০ বার; সেখানে পরাজয় মিলেছে ১৬ বার!
এসব পরাজয়ের প্রতিপক্ষের নাম শুনলেও চুপসে যেতে পারে আশার বেলুন। এক ম্যাচের যে ৯টি সিরিজে হেরেছে বাংলাদেশ দল, সেখানে রয়েছে স্কটল্যান্ডেরও নাম। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেয়ার পরের সিরিজেই স্কটিশদের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এছাড়া কমপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজগুলোতে বাংলাদেশের পরাজয়ের সংখ্যা ৭টি সিরিজে। যার মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে সবচেয়ে বিব্রতকর ছিলো গতবছর পূর্ণশক্তির দল নিয়েও আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হেরে যাওয়া। এছাড়া নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও নাকানিচুবানি খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের।
এদিকে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস যেখানে রীতিমতো হতাশাজনক, সেখানে ভারত অনুপ্রেরণা পেতে পারে তাদের বিগত দিনের সিরিজগুলো থেকেই। ঘরের মাঠের দলটি এখনও পর্যন্ত খেলেছে ৪০টি টি-টোয়েন্টি সিরিজ, জিতেছে ২০টিতে, ড্র হয়েছে ৮ সিরিজ আর হেরেছে বাকি ১০টিতে।
এর মধ্যে তিন ম্যাচের সিরিজই ছিলো ১৫টি। যার মধ্যে ভারতের জয় ১০টিতে, ড্র হয়েছে ৩টি আর পরাজয় মাত্র ২টিতে। এটুকুতেই অবশ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে না বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ। কেননা প্রথম ম্যাচ হেরেও শেষ দুইটি জিতে সিরিজ বাগিয়ে নেয়ার অতীত ইতিহাসও যে রয়েছে ভারতীয় দলের। তাও একবার নয়, তিন-তিন বার।
২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হেরেও পরের দুইটিতে জিতে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছিল ভারত। এর আগের বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও একইভাবে সিরিজ জিতেছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। একই বছর শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও প্রথম ম্যাচ হারের পর সিরিজ জিতেছিল ভারত।
সবমিলিয়ে অতীত পরিসংখ্যানের পুরোটাই বাংলাদেশের বিপক্ষে এবং ভারতের পক্ষে। তবে টাইগারদের পক্ষে রয়েছে নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়া এবং টিম ম্যানেজম্যান্টের কাছ থেকে পাওয়া পূর্ণ স্বাধীনতা। যা দিল্লিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উজ্জীবিত করেছে পুরো দলকে। সেই ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বদলে যাবে অতীত পরিসংখ্যান, নতুন করে লেখা হবে টাইগারদের অনেক ইতিহাস।